কালো তেলে ভাসছে সুন্দরবন by একে আজাদ

কালো তেলের জোয়ারে ভাসছে সুন্দরবন। পানিতে, চরে, গাছে শুধু তেল আর তেল। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বইছে কালো তেলের বন্যা। খাল ও নদীর পাড়ের গাছ, গাছের শ্বাসমূল তেলে ঢেকে গেছে। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ভাসমান তেল নষ্ট করার কথা বলা হলেও গতকাল বিকাল নাগাদ তা শুরু করা যায়নি। ওদিকে অর্ধনিমজ্জিত ট্যাংকারটিকে স্থানীয় ডুবুরিরা বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে টেনে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে এনেছেন। সরকারি নির্দেশনায় শেলা নদীতে নৌচলাচল বন্ধ থাকায় মংলাবন্দর থেকে  ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী কোস্টার লাইটারে মালামাল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্যাঙ্কারের মাস্টার মোকলেসুর রহমান (৫০)-কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। সরজমিনে ঘুরে জানা দেখা গেছে, গত ৩ দিনে ভাসমান তেলের বিস্তৃতি ছড়িয়ে গেছে সুন্দরবনের আনাচে কানাছে। জোয়ারের সময় কালো তেল ভাসছে নদী ও খালে। আর ভাটার সময়ে তা জড়িয়ে যাচ্ছে খাল-নদীর দু’পাড়ের গাছে গাছে। গাছের শ্বাসমূল ঢেকে রয়েছে কালো তেলে। নদীতে ইরাবতি-শুশুকের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের পশুর নদী ও তার শাখা প্রশাখা খালের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ অবস্থা চলছে। ওদিকে অর্ধনিমজ্জিত ট্যাঙ্কার সাউদার্ন স্টার-৭কে গতকাল দুপুর বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী স্যালভেজ এন্টারপ্রাইজের বার্জ বিডি রাইজিং ও তিনটি উদ্ধারকারী জাহাজের সহায়তায় সরিয়ে জয়মণি ফরেস্ট অফিস ঘাটের কাছে রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল থেকে রওনা হওয়া বিআইডব্লিউটির উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও নির্ভীক তখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। আর চট্টগ্রাম থেকে রওনা হওয়া টাগবোট কাণ্ডারি-১০ সন্ধ্যা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে বলে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কেএম আকতারুজ্জামান জানিয়েছেন। এই টাগবোটে ১০ হাজার লিটার তেলের দূষণ কমানোর মতো অয়েল সিপল ডিসপারস্যান্ট রয়েছে বলে জানা গেছে। এ রাসায়নিক পদার্থ পানিতে ছিটালে ভেসে থাকা তেল ফোম হয়ে পানির নিচে চলে যাবে এবং পানির অক্সিজেন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
 মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, তেল অপসারণে করণীয় নির্ধারণে বৃহসপতিবার সকালে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা খন্দকারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে স্থানীয় জেলেদের সহায়তা নিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে তেল অপসারণের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। নিখোঁজ মাস্টার মোখলেসুর রহমানকে উদ্ধারে কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগ পৃথক অভিযান চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.