রাশিয়া এখনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগী: মোদি

নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে গতকাল বাতি জ্বালিয়ে ‘বিশ্ব হীরা সম্মেলন’-এর
উদ্বোধন করেন (বাঁ থেকে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর। ছবি: এএফপি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতের এখন অনেক বন্ধু। তবে রাশিয়া প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী থেকে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় মোদি রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে আরও ১০টি পরমাণু জ্বালানি চুল্লি নির্মাণের ঘোষণা দেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির। গত মে মাসে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ভ্লাদিমির পুতিন ভারত সফর করলেন। গতকাল প্রথমবারের মতো শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হলেন দুই নেতা। বুধবার রাতে পুতিন ভারতে পৌঁছেছেন। সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, ‘আমরা আরও ১০টি পরমাণু চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করছি। এসব চুল্লিতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পুতিনের এই সফরে ভারতে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বাড়ানের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
যৌথ উদ্যোগে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কথাও আলোচনায় থাকবে। নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নতুন বন্ধুর খোঁজে ভারত সফরে এসেছেন। মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমের দুয়ার বন্ধ হওয়ায় নতুন বাজার খোঁজা পুতিনের এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। রাশিয়া সম্প্রতি দীর্ঘ সময় পর ভারতের তামিলনাড়ুর কুদানকুলানের পরমাণুকেন্দ্রের জন্য দুটি চুল্লি পাঠিয়েছে। দেশটি ভারতে আরও চুল্লি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। চুল্লি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে চুক্তি হয়। এর আগে গত জুলাইয়ে ব্রাজিলের ব্রিকস সম্মেলনে এবং গত মাসে অস্ট্রেলিয়ায় জি-২০ সম্মেলনে বৈঠক করেছিলেন মোদি ও পুতিন। পুতিনের এই ভারত সফরকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতেই ভারত সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি থাকার কথা তাঁর। পুতিনের সফর নিয়ে এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে এর পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে তাদের চলমান ‘শীতল সম্পর্কের’ কথা বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে অবগত করার কথাও বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক কর্মকর্তা।
গতকাল মোদি স্পষ্ট করেছেন, দুই পুরোনো মিত্রদেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে। মোদি বলেন, ভারত ও রাশিয়ার জনগণের সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী। সুদিনে-দুর্দিনে দুটি দেশ সব সময় একে অপরের কাছাকাছি থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর এখন ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। রাশিয়ায় বড় বড় তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে ভারত নিয়োজিত হতে চাইছে। দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় এই বিষয়টিও থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। দেশটিতে গ্যাসের বিপুল মজুতও আছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে ভারতের, বিশেষ করে খাদ্য রপ্তানি বেড়ে গেছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়ার ‘হস্তক্ষেপের’ পর দেশটির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ভারত আগেই স্পষ্ট করে বলেছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসব অবরোধে অংশ নেওয়ায় আগ্রহী নয়। মোদি ও পুতিন রাশিয়া থেকে ভারতে অপরিশোধিত হীরা রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন। রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত হীরা উৎপাদনকারী দেশ। আর ভারত এই হীরার অন্যতম বড় আমদানিকারক।

No comments

Powered by Blogger.