গুয়ান্তানামো বে থেকে ১২ বছর পর মুক্ত জীবনে

এক যুগের বেশি বিনা অভিযোগে আটক থাকার পর কুখ্যাত বন্দিশিবির গুয়ান্তানামো বে থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৬ বন্দি। তাদের উরুগুয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার উরুগুয়ে পৌঁছানোর পর তাদের সামরিক হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। তারা উরুগুয়েতে পৌঁছেন শরণার্থী হিসেবে। উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা মার্চ মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার দেশ মানবাধিকারের ভিত্তিতে বন্দিদের গ্রহণ করবে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্দেজ হুইদোব্রো জানিয়েছেন, সদ্য মুক্তি পাওয়া প্রত্যেকেই ভাল আছেন। তবে তিনি সিরীয় নাগরিক জিহাদ দিয়াব (৪৩)-এর শোচনীয় অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি গুয়ান্তানামোতে থাকাকালে অনশন পালন করছিলেন। পাশাপাশি একটি মার্কিন আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কারাগার কর্তৃপক্ষ যেন তাকে খাবার খাওয়ানো বন্ধ করে। মুক্ত ছয়জনের মধ্যে দিয়াবে ছাড়াও রয়েছেন তিনজন সিরীয়, একজন ফিলিস্তিনি এবং একজন তিউনিসিয়ার নাগরিক। প্রত্যেকের বয়স তিরিশ ও চল্লিশের কোঠায়। ২০০২ সালে গুয়ান্তানামোতে পাঠানো প্রথম বন্দিদের মধ্যে ছিলেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে আল-কায়েদার সঙ্গে যোগসূত্রের সন্দেহে তাদের বন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু কোন অভিযোগ গঠন বা বিচার কখনও করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তাদের মুক্তির ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিয়েছে যে, নিরাপত্তার কারণে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্দেজ জানিয়েছেন, দিয়াব খাওয়া-দাওয়া শুরু করেছেন। দ্রুত তিনি সামরিক হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। দিয়াবের আইনজীবী অলকা প্রধান বলেছেন, দিয়াব হাঁটা-চলা করার মতো পরিস্থিতিতে নেই। বন্দিশালায় ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পর থেকে এখন তিনি বেশির ভাগ সময় হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। উরুগুয়েতে তিনি নতুন এক জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন। উল্লেখ্য, উরুগুয়ে শুধু মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিচ্ছে, তা-ই নয়; একই সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার জন্য আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছে দেশটির সরকার। অলকা প্রধান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তার মক্কেল দ্রুত স্প্যানিশ ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। দিয়াব উরুগুয়ের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চান। তিনি প্রমাণ করতে চান তিনি ও বাকি বন্দিদের বিষয়ে যা কিছু বলা হয়েছে তা ভুল। ছয়জনের মধ্যে মুক্ত আরেক সিরীয় উরুগুয়ের সংবাদপত্র এল পায়েসে পাঠানো এক চিঠিতে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আমার নাম আব্দেল হাদি ওমার ফারাজ। বিগত ১২ বছর ধরে গুয়ান্তানামোতে ৩২৯ নম্বর বন্দি হিসেবে আমি পরিচিত ছিলাম। নিজেকে মধ্যবিত্ত এক পরিবারের অভিবাসী কর্মী হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর অর্থের বিনিময়ে তাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়। রাখা হয় মানবেতর পরিবেশে। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে জুন মাসে তার গন্তব্য হয় গুয়ান্তানামো বে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তির ছাড়পত্র দিলেও সিরিয়ায় পাঠাতে চায়নি। তত দিন গৃহযুদ্ধের কবলে সিরিয়া। ফারাজ লিখেছেন, উরুগুয়ে এগিয়ে না এলে আমি এখনও ওই কৃষ্ণ গহ্বরেই থাকতাম। তার আইনজীবী বলেন, উরুগুয়েকেই এখন নিজ দেশ বলে বিবেচনা করছেন ফারাজ। অদূর ভবিষ্যতে দেশ ছাড়ার কোন ইচ্ছা তার নেই। কিউবার দক্ষিণপূর্বে মার্কিন নৌ-ঘাঁটিতে গুয়ান্তানামো বন্দিশালা স্থাপন করা হয় প্রায় ১৩ বছর আগে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭৭৯ জন বন্দিকে সেখানে রাখা হয়েছে। পেন্টাগন বলছে, বর্তমানে সেখানে রয়েছে ১৩৬ জন যার মধ্যে ৬৭ জনের মুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ওবামা ও তার পূর্ববর্তী বুশ প্রশাসন।

No comments

Powered by Blogger.