সিদ্ধান্তটা সময় নিয়ে করলে ভাল হতো -বাদলের শাস্তি প্রসঙ্গে খালেদ মাসুদ

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ অনেক পুরনো। এক সময়ে আবাহনী-মোহামেডান দুই দলেরই অভিযোগের তীর ছুটতো তাদের দিকে। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ওই দুই জনপ্রিয় ক্লাবের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এবং দর্শকদের আগ্রহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়ায় অভিযোগকারীদের কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে গেছে। তবে এবার নতুন করে এ অভিযোগ জোরালোভাবে উঠিয়েছেন গত আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং এবারের সবচেয়ে তারকাখচিত দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের প্রধান লুৎফর রহমান বাদল। তার অভিযোগ ছিল খেলার মাঠ নির্ধারণ নিয়েও। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিকার না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেঁসে গেছেন। একতরফা সিদ্ধান্তে তাকে নিষিদ্ধ করেছে বিসিবি। গতকাল এই নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাড়াজাগানো দল কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির কোচ খালেদ মাসুদ পাইলটও একই অভিযোগ তুললেন। খালেদ মাসুদ বলেন, ‘আসলে ক্লাব ক্রিকেটের অনেক কর্মকর্তাই আছেন যারা বিসিবি’র পরিচালক। স্বাভাবিকভাবে তারা প্রত্যেকেই চান নিজেদের দল জিতুক। এখানে আম্পায়ারিং নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তা আমার কাছে দুঃখজনক মনে হয়েছে। আমরা জানি আম্পায়ারিং বিভাগ অত্যন্ত স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। এখানে কারও হস্তক্ষেপ চলে না। বাংলাদেশে অনেক ভাল ভাল আম্পায়ার আছেন। কিন্তু যদি পিছন থেকে দড়ি ধরে রাখেন তাহলে তাদের পক্ষে স্বচ্ছ আম্পায়ারিং করা কঠিন। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি বোর্ডকে আরও নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রত্যেক বিভাগের কাজটা স্বাধীন ভাবে করতে দেয়া উচিত। তাহলে এমন ঘটনা হবে না। আমার মনে হয় মাঠের ক্রিকেট মাঠেই হওয়া উচিত। তা না হলে ক্লাব ক্রিকেটে প্রভাব থাকবেই।’
বেশ কয়েকটি দল আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ তুললেও খালেদ মাসুদ পাইলটের দল কলাবাগান  সিএ’র সঙ্গে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে অন্যান্য দলের অভিযোগের সূত্র ধরেই তিনি আম্পায়ারদের স্বাধীন ভাবে কাজ করার বিষয়ে জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমার দলের সঙ্গে এমনটি হয়নি। তবে আমি শুনেছি অন্যান্য দল ভুক্তভোগী। দেখুন, বাংলাদেশের ট্রাফিক পুলিশ কিন্তু ঘুষ খেত না। কিন্তু তাদেরকে এই সিস্টেম বাধ্য করেছে ঘুষ খেতে। আমরা সৎ মানুষগুলোকে অসৎ বানাচ্ছি। আম্পায়ারিংয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভুল হয়। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত ভুল হয় তখন মনে হয় যে কারও চাপে এটা করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্র থেকে বলছি আম্পায়ারদের স্বাধীন করে দিলে এই ভুলগুলো হতো না।’
অন্যদিকে কোন মাঠে কোন দলের খেলা হবে সেটা নিয়ে সিসিডিএম’র ভূমিকা আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত বলে মনে করেন খালেদ মাসুদ। তিনি বলেন, ‘যদি আমি খালেদ মাসুদ একজন ক্রিকেটার আর আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় মেডিকেল কলেজের তাহলে কিন্তু আমি কাজটা ঠিকভাবে করতে পারবো না। আমি বলতে চাইছি, সিসিডিএমেও ক্রিকেট এক্সপার্ট লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। তারা বুঝবে যে কেমন ক্যালেন্ডার হবে। আর মাঠ ও ফিক্সচার সমস্যা সমাধানে আমার মনে হয় লটারি পদ্ধতি করে দেয়া প্রয়োজন। তাহলে এখানে স্বচ্ছতা থাকবে। নয়তো এই সব নিয়ে বিতর্ক  থেকেই যাবে।’
লুৎফর রহমান বাদলকে নিয়ে বিসিবি’র কঠিন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সব চেয়ে বড় বিষয় হলো সবাইকে জানতে হবে যে কোন জায়গাতে কি কথা বলতে হবে। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। আবার বিসিবি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। তাদেরও আরও উদার হতে হবে। অনেকেই অন্যায় করেন সেই অন্যায়ের শাস্তিটা সুন্দর একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। বিসিবি যে বিষয়গুলো বলবে বা যে সিদ্ধান্তগুলো হবে সেটি আরও সুন্দর ও স্বচ্ছ হতে হবে। তাহলে সব ফেডারেশন মনে করবে যে সেখান থেকে শেখার কিছু আছে। তবে আমি বলবো সিসিডিএম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভাল কিন্তু আরও সময় নিয়ে সিদ্ধান্তটা নিলে আরও ভাল হতো। যেমন আমাদের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু একটি কথা বলেছেন যে, তাকে (বাদল) আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন ছিল। তার কথা গুলোও শোনা উচিত ছিল। আমিও মনে করি এটি হলে খুব ভাল হতো।’

No comments

Powered by Blogger.