তথ্যপ্রযুক্তিসেবা গ্রামে গ্রামে by শরিফুজ্জামান

সোনাইলতলা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে মংলা শহরের দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। চার কপি ছবি তুলতে ৪০ টাকা, আর শহরে আসা-যাওয়ার খরচ ১০০ টাকা। এর সঙ্গে সময় আর কষ্ট তো আছেই। গৃহবধূ মর্জিনা বেগম এখন আর মংলা শহরে যান না। ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়ে ২০ টাকায় ছবি তুললেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঘর-সংসারের কাজকর্ম ফেলায়ে শহরে যেয়ে ছবি উঠাতি যে টাহা লাগত, তার কয়গুণ বেশি খরচ করতি হতো যাতি-আসতি।’
মর্জিনার মতো দেশের লাখ লাখ মানুষ এখন নিজের ইউনিয়নে বসেই তথ্যপ্রযুক্তিসেবা পাচ্ছে। সরকারি হিসাবে প্রতিদিন এই সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। আর সারা দেশে তথ্যসেবাকেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। মংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের রমেশ বাড়ই ও তাঁর স্ত্রী কল্যাণী বাড়ই আগে ভারতের ভিসার আবেদন করতে ৬০ কিলোমিটার দূরে খুলনা শহরে যেতেন। এখন ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র থেকেই ভিসার আবেদন করেন।
তাঁদের মতো অনেকেই এখন ইউনিয়ন বা পৌরসভা সেবাকেন্দ্রে গিয়ে কম খরচে ৬০ ধরনের সেবা পান। সরকারি খরচে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ এবং বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক তিন লাখ নারী তথ্যসেবাকেন্দ্রে নিবন্ধন করেছেন।
সৌদি সরকারের শর্ত অনুযায়ী, হজে যাওয়ার জন্য অনলাইন নিবন্ধন এবং যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মোট এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজযাত্রীকে এই নিবন্ধন করতে হবে ২১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি সরকারের এই শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পারবে। কারণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইতিমধ্যে এ ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত দিন ইউনিয়ন পরিষদ মানেই ছিল গ্রাম্য সালিস-বিচারের কাজ। এ ছাড়া কিছু চাল বা গম বিতরণ। প্রচলিত এই ধারণা পাল্টে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ।
একাধিক সেবাকেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অনেকেই এখন বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে ‘স্কাইপ’ বা ‘ভাইবার’-এ কথা বলেন, ছবি দেখেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় তথ্যসেবাকেন্দ্রগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। তবে সব কেন্দ্র এখনো সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি।
যাত্রা শুরু: জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কারিগরি সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সহযোগিতায় দেশজুড়ে এসব কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
১২ কোটি সেবা, ১৪০ কোটি আয়: ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ স্লোগান নিয়ে কেন্দ্রগুলো যাত্রা শুরু করেছিল। চা র বছরের মাথায় মানুষকে আর সেবার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে না। এটুআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রগুলো প্রায় ১২ কোটি সেবা দিয়েছে এবং এর বিনিময়ে উদ্যোক্তারা এ পর্যন্ত প্রায় ১৪০ কোটি টাকা আয় করেছেন। এই হিসাব বের করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা নমুনা হিসেবে দেশের পাঁচটি এলাকায় সরেজমিনে সেবাকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেছেন। এ সময় তাঁরা লক্ষ করেছেন, ইন্টারনেটের ধীরগতি, বিদ্যুৎ না থাকা, কম্পিউটার নষ্ট থাকা, নারী উদ্যোক্তাদের অভাব এবং ইউনিয়ন পরিষদের কিছুসংখ্যক চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার কারণে কিছু সেবাকেন্দ্র ঠিকমতো চলছে না।
তবে বিদ্যুৎ না থাকলেও কিছু এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সেবাকেন্দ্র চলে। মংলার মিঠাখালী, সুন্দরবন ও চিলা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু সৌরবিদ্যুতের সাহায্যেই কেন্দ্রগুলো চলছে। একই উপজেলার চাঁদপাই, সোনাইলতলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ-সুবিধা থাকায় সেখানে কেন্দ্রগুলো ঠিকমতো চলছে।
প্রতিটি ডিজিটাল কেন্দ্রে দুজন করে উদ্যোক্তা কাজ করেন—ন্যূনতম মাধ্যমিক পাস করা একজন নারী ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করা একজন পুরুষ। নারী উদ্যোক্তা থাকায় কেন্দ্রে নারীদের জন্য কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে অধিকাংশ কেন্দ্রে নারী উদ্যোক্তা নেই। বিয়ে বা অন্য চাকরি পাওয়ার পর নারীরা কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রগুলো ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার কাজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে এবং তাদের লোকবল বাড়ালে কেন্দ্রগুলো আরও কার্যকর হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এটা মন্দের ভালো। এর উন্নয়নের মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষকে সেবা দেওয়ার আরও অনেক সুযোগ রয়েছে।
মোট তথ্যসেবাকেন্দ্র: সরকারি হিসাবে এখন দেশের চার হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়নে ডিজিটাল কেন্দ্র চালু রয়েছে। ইউনিয়নের সফল অভিজ্ঞতার পর ৩২১টি পৌরসভায় পৌর ডিজিটাল সেন্টার, ১১টি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে ৪৬০টি নগর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তথ্যসেবাকেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩২৮।
সব কেন্দ্রই যে ভালো চলছে, তা নয়। শুরুটা ছিল খুবই হতাশাজনক। প্রথম বছরে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ সেবাকেন্দ্রের তালাই খোলা হতো না। আর এখন ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সেবাকেন্দ্র খোলা থাকে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থাপিত ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্রের মধ্যে প্রতিদিন ৬০০ থেকে এক হাজার কেন্দ্র বন্ধ থাকছে। ৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ৬৬৩টি ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় ছিল। আর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে ৮৬০টি ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় দেখা যায়।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক প্রথম আলোকে বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ডিজিটাল সেন্টারগুলো গ্রাম ও শহরের দূরত্ব কমিয়ে আনতে যে ভূমিকা রাখছে, তা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে। তথ্যপ্রযুক্তিসেবায় অবদানের জন্য সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি এবং ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্স পুরস্কার অর্জন করার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সেবার বিকাশ ও মান বাড়াতে সরকারের আরও অনেক কিছুই করার রয়েছে। সরকারের নেওয়া দুটি প্রকল্প (বাংলাগভডটনেট ও ইনফোডটসরকার) বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
সেবার ধরন: তৃণমূল মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতিটি কেন্দ্রে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেট মডেম, ইউপিএসসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দিয়েছে। এসব খাতে মোট খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া এটুআইয়ের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে প্রায় ২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী যন্ত্রপাতি কিনেছেন।
বিভিন্ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেবার মূল্য বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রায় একই রকম। ২০ টাকায় জন্মনিবন্ধন, ৫০ টাকায় বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন, মোবাইল ব্যাংকিং, ১০ টাকায় পরীক্ষার ফল, পাঁচ টাকায় অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, ২০ টাকায় ছবি তোলা, ১০ টাকায় লেমিনেটিং, পাঁচ টাকায় স্ক্যানিংসহ কম খরচে গ্রামের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তিসেবা পায়।
এটুআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, এসব কেন্দ্রে সাত কোটি অনলাইন জন্মনিবন্ধন হয়েছে। জীবন বীমা করপোরেশন দেশের দুই হাজার ৭৬৮টি বিমাসেবা চালু করেছে। এ পর্যন্ত মোট ৩৬ হাজার এই নাগরিক সেবা গ্রহণ করেছেন। ডাচ্-বাংলা, ট্রাস্ট, ওয়ান ব্যাংক ও বিকাশ দুই হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এই সেবা নিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এ পর্যন্ত ৭২৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে। গ্রামের মানুষ উপজেলা বা জেলা অফিসে না গিয়েও জমির পর্চার নকলের জন্য আবেদন করতে পারছে।
এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ফটোকপি, লেমিনেটিংসহ বিভিন্ন সেবাও দিচ্ছে এসব কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই তথ্যসেবাকেন্দ্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি, মিলিয়ে দেখলেই অগগ্রতি বোঝা যাবে।’
প্রচারের অভাব: প্রকল্পটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও যথেষ্ট প্রচার নেই। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা সরেজমিনে দেখেছেন, গ্রামের অনেক মানুষ এখনো সেবাকেন্দ্র সম্পর্কে জানে না। এটুআইয়ের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, শুরুতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা নিজেদের মতো প্রচার করেছেন। প্রায় ছয় মাস ধরে এটুআইয়ের পক্ষ থেকে টিভি বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সেবাকেন্দ্রের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে জেলা তথ্য কর্মকর্তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের এ বিষয়ের অগ্রগতি জানান।
ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য প্রায় এক বছর ধরে কাজ করেছেন ডেভেলপমেন্ট সিনার্জি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মনোয়ার মোস্তফা। তাঁর মতে, এ উদ্যোগ গ্রামের কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের সময় বাঁচিয়েছে, ঘুষ দেওয়ার হাত থেকে তাদের মুক্ত করছে এবং দ্রুত সেবা পাওয়া নিশ্চিত করেছে। যদিও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি এসব কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
মনোয়ার মোস্তফা এ উদ্যোগের মধ্যে সরকারের কিছুটা বাগড়ম্বর থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মানুষ উপার্জন করতে পারবে বা আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে যেসব প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলো আসলে বাস্তবসম্মত নয়।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ (রাজশাহী), তুহিন আরন্য (মেহেরপুর), শংকর দাস (পটুয়াখালী), সাধন বিকাশ চাকমা, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) ও সুমেল সারাফাত, মংলা (বাগেরহাট)}

No comments

Powered by Blogger.