ধর্মান্তকরণ করতে চাঁদা তুলছে আরএসএস

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মান্তকরণের জন্য এবার চাঁদা তোলার তোড়জোড় শুরু করেছে ভারতের কট্টর হিন্দুবাদী আরএসএস-এর শাখা সংগঠন। বড়দিনে প্রস্তাবিত ধর্মান্তকরণ অনুষ্ঠানের খরচ তুলতে ইতিমধ্যে সংগঠনের তরফ থেকে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। সম্প্রতি আগ্রায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিরুদ্ধে কয়েকটি মুসলিম পরিবারকে জোর করে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় তীব্র বিক্ষোভ প্রকাশ করে। ভারতজুড়ে নানা মহলে এই ঘটনার সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু তাতে যে উগ্র হিন্দুবাদীদের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি, আলিগড়ে প্রস্তাবিত ধর্মান্তকরণ সূচীই তার প্রমাণ। আরএসএস-এর শাখা সংগঠন ধর্ম জাগরণ সমিতির পক্ষ থেকে প্রচারপত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর শহরের মাহেশ্বরী কলেজে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০০০ মুসলিম ও ১০০০ খ্রিস্টানকে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করা হবে। গোরখপুরের বিজেপি এমপি যোগী আদিত্যনাথ এই অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করবেন বলে জানা গিয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিপুল খরচ তুলতে চাঁদা চেয়ে ধর্ম জাগরণ সমিতির পশ্চিম ক্ষেত্র (পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, ব্রজপ্রান্ত, মীরাট ও উত্তরাখন্ড) শাখার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক মুসলিমকে ধর্মান্তকরণের খরচ পড়ে ৫ লাখ রুপি এবং প্রত্যেক খ্রিস্টানকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার খরচ পড়ে ২ লাখ রুপি। এই কারণে ‘ঘর ওয়াপসি’ অনুষ্ঠানের জন্য ‘বন্ধুবর’দের মুক্তহস্তে দান করার আর্জি জানানো হয়েছে প্রচারপত্রে। শুধু তাই নয়, প্রচারপত্রের বয়ান অনুসারে মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ‘সমস্যা’ বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কাঁসিনাথ বনসল জানিয়েছেন, ‘যেহেতু মুসলিম ও খ্রিস্টানরা মূর্তিমান সমস্যা, তাই তার সমাধানে বিপুল খরচ করার প্রয়োজন হয়।’
তবে প্রস্তাবিত অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করার কথা যার, সেই যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ‘প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। মানুষ স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। যখন হিন্দুদের ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত করা হয়, তা নিয়ে কোনো মহল থেকেই আপত্তি ওঠে না।’
তবে আদিত্যনাথ যা-ই বলুন না কেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয় জেলা প্রশাসন। আলিগড়ের এসএসপি জে রবীন্দ্র গৌড় জানিয়েছেন, ‘মাহেশ্বরী কলেজে প্রস্তাবিত ঘর ওয়াপসি অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ার প্রশ্ন নেই। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নিষেধ সত্ত্বেও অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, বছরের শেষে ধর্মান্তকরণ অনুষ্ঠানের খবরে স্থানীয় মুসলিম এবং খ্রিস্টান সমাজের সদস্যরা প্রবল বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.