২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাব। তিনি বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর রসুলপুর (দুর্গাপুর) এলাকায় কোস্টগার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ ‘অগ্রযাত্রা’র উদ্বোধন শেষে সুধী সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রার আনুষ্ঠানিক কমিশনিং করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এ বাহিনীর ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরেক ধাপ অগ্রগতির দিন। তিনি বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্রের অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তিনি ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফায় তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরসহ একটি সুসংগঠিত নৌবহরের দাবি জানিয়েছিলেন। জাতির পিতা এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে সমুদ্র অধিকার বাস্তবায়নের নিরিখে ১৯৭৪ সালে টেরিটরিয়াল ওয়াটার্স ও মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট প্রণয়ন করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার লক্ষ্য পূরণে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পরই বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেই। ফলে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকা এবং এর সম্পদের ওপর আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্পদ আহরণসহ সমুদ্র এলাকার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের সমুদ্র সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সামুদ্রিক আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি বলেন, বিশাল সমুদ্র সম্পদের পাশাপাশি সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনাও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এ ক্ষেত্রটির সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আমরা সবকিছু করব। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, নদীমাতৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলজ সম্পদ সুরক্ষা এবং নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে কোস্টগার্ডের ভূমিকা অপরিসীম। এ বাহিনীর সদস্যদের কর্তব্যনিষ্ঠা এবং কর্মদক্ষতায় বর্তমানে উপকলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ড একটি আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুতা, চোরাচালান রোধ, জাটকা নিধন বন্ধ, মা ইলিশ রক্ষা, মাদক ও মানব পাচার রোধে কোস্টগার্ডকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার জনগণকে আরও সেবা দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোস্টগার্ডে একটি জোন, তিনটি বেইস, ১৮টি স্টেশন, ১০টি আউটপোস্ট, ৫৭টি বিভিন্ন ধরনের জলযান, আটটি পন্টুুন এবং ১ হাজার ২৮২ জন জনবল যুক্ত করা হয়েছে। আরও বিভিন্ন ধরনের ১৮টি জলযান ও আটটি পন্টুন নির্মাণাধীন আছে। যা খুব শিগগিরই বহরে সংযোজিত হবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। তিনি এ লক্ষ্য পূরণে কোস্টগার্ডসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণকে আÍনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
বেলা ২টায় কোস্টগার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে পৌঁছে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ডের একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সিজি বেইস অগ্রযাত্রার উদ্বোধন করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী একইস্থান থেকে ইউজিআইআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, বাউফলের উত্তর কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, কলাপাড়ার খাপড়াভাঙ্গা ইউপি- ডাবলুগঞ্জ হাট সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, গলাচিপার ছোট চরকাজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, কচাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করেন এবং কলাপাড়ায় আনসার-ভিডিপি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার, পটুয়াখালী সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) হোস্টেল ভবন, পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন, রাঙ্গাবালীর গহিনখালী বাজার কাম সাইক্লোন শেল্টার ও সংযোগ সড়ক, বাউফলের সাবুপাড়া ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পটুয়াখালী সদর পুলিশ ফাঁড়িতে ৬ তলা ভবন ও দশমিনায় ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.