পেটে গুলি নিয়ে ৪৩ বছর! by খলিল রহমান

নদীর তীরে হাত বেঁধে অন্যদের সঙ্গে দাঁড় করানো হয়েছিল কৃষক ব্রজেন্দ্র দাসকে। এরপর একজন একজন করে গুলি করে রাজাকাররা। লাশ ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। পেটে গুলিবিদ্ধ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। রাজাকারদের ছোড়া গুলিটি এখনো ব্রজেন্দ্র দাসের শরীরে বিঁধে রয়েছে। মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণা হয়। ৪৩ বছর ধরে এই যন্ত্রণা ভোগ করছেন তিনি। তাঁর পেটের ডান পাশে রয়েছে একটি কাটা দাগ। ওই স্থান দিয়েই গুলিটি ঢুকেছিল। সেখানে হাত দিলেই চামড়ার নিচে গুলিটির অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। ব্রজেন্দ্র দাসের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে তিনি গ্রামের রামকুমার রায় নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ৬ ডিসেম্বর সকালে ওই গ্রামে হামলা চালায় রাজাকাররা। তারা বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে ব্রজেন্দ্র দাসসহ পেরুয়া ও আশপাশের গ্রাম থেকে ২৬ জনকে ধরে নিয়ে গ্রামের পাশে মরা সুরমা নদীর ঘাটে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয়। এরপর রাজাকাররা পর্যায়ক্রমে সবাইকে গুলি করে। ব্রজেন্দ্র দাসের পাশেই ছিলেন গ্রামের শিক্ষক উপেন্দ্র চন্দ্র রায়। উপেন্দ্রকে যখন গুলি করা হয়, তখন ব্রজেন্দ্র দাস ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। কোনো রকমে দুই পা দিয়ে সাঁতরানোর চেষ্টা করেন। ওই অবস্থাতেই তাঁর ওপর গুলি চালায় রাজাকাররা। একপর্যায়ে হাতের বাঁধন খুলে ফেলতে সক্ষম হন তিনি। এরপর সাঁতরে তিনি নদীর পশ্চিম পাড়ে উঠে দেখেন পেট থেকে রক্ত ঝরছে। সেখান থাকে কাছেই তাঁর বাড়িতে দৌড়ে চলে যান। এরপর বাড়ির লোকজন ক্ষতস্থানে লতাপাতা ও কাপড় দিয়ে চেপে ধরেন। স্থানীয় এক পিল্লচিকিৎসক তাঁকে কিছু ওষুধ দেন। ওই ওষুধ সেবন করে তাঁর পেটের ক্ষত ভালো হয়। কয়েক দিন পর অনুভব করেন, তাঁর পেটের এক পাশে চামড়ার নিচে গুলি আটকে রয়েছে। এরপর দরিদ্র কৃষিশ্রমিক ব্রজেন্দ্র আর কোনো চিকিৎসকের কাছে যাননি। ব্রজেন্দ্র দাস বলেন, ‘মাঝে মাঝে যন্ত্রণা হয়। আমি গরিব মানুষ। কোথায় কী করতে হবে জানি না। কেউ কখনো বলেনি, এই গুলি পেট থেকে বের করা যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.