জরুরি অবস্থার বিধান জানতেন না ইন্দিরা!

ভারতীয় সংবিধানে থাকা জরুরি অবস্থার বিধান সম্পর্কে জানতেন না দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তখনকার জ্যেষ্ঠ কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের পরামর্শেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তিনি। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তাঁর নতুন বই ‘ড্রামাটিক ডেকেড: দ্য ইন্দিরা গান্ধী ইয়ারস-এ লিখেছেন এ কথা। খবর এনডিটিভির। ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে ভারতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রণব মুখার্জির ৭৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে তাঁর বইটি প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার যুক্তি দেখিয়ে যে জরুরি অবস্থা জারি করা যায়, তা ইন্দিরা জানতেন না। প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘ইন্দিরা সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থার বিধান সম্পর্কে সংবিধানে আক্ষরিকভাবে কী বলা আছে, তা শ্রী রায়ের কাছে জানতে চান। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সুপারিশ দিতে বলেন।’ ইন্দিরার জারি করা জরুরি অবস্থার সময়টি ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। সে সময় বিরোধী দলগুলোর শত শত নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়।
গণমাধ্যমের ওপর আরোপিত হয় কঠোর নিয়ন্ত্রণ। তবে কথিত ক্ষমতার অপব্যবহার তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত শাহ কমিশনের কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর উল্টো অবস্থান নেন বলে প্রণবের বইয়ে দাবি করা হয়েছে। প্রণবের বইয়ে বেশ কিছু ‘গোপন’ তথ্য আছে। যেমন, এতে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর চিঠি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ইন্দিরা বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর একান্ত নিজের। মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বইতে রাষ্ট্রপতি প্রণব জরুরি অবস্থা জারিকে একটি ‘পরিহারযোগ্য ঘটনা’ বলে অভিহিত করেন। তবে এর কিছু ‘ইতিবাচক’ দিকও তুলে ধরেন তিনি। রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, ‘জনজীবনে শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং চোরাচালান রোধ করতেই এটি জারি করা হয়েছিল।’ বইটিতে ভারতের রাজনীতির অনেক পালাবদলের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। এটি বইয়ের দোকানে পেতে আরও ২১ দিন লাগবে। তবে তার আগেই অনলাইনে কেনা যাবে। প্রণব মুখার্জি ২০১২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন। তিনি দেশটির প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি অর্থ, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.