স্থবির হয়ে পড়েছে মংলা বন্দর by এ কে আজাদ

নৌ রুটের অভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চল মংলা বন্দর। শেলা নদীতে ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর থেকে এ বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বাণিজ্যিক জাহাজের মালামাল পরিবহন কাজ। কবে নাগাদ এ জটিলতার নিরসন ঘটবে তা স্পষ্ট করে কোন মহলই বলতে পারছেন না। শেলা নদীর দু’প্রান্তে অপেক্ষা করছে শ’ শ’ লাইটার জাহাজ। বিশেষ করে সার বোঝাই লাইটারগুলো বন্দরে আটকে পড়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সার সঙ্কট শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী টাইম চার্টারের জাহাজগুলো লাইটারের অভাবে পণ্য খালাস করতে পারছে না। এতে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে টাইম চার্টারের জাহাজগুলো। সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পারায় জাহাজগুলো বন্দর ত্যাগে বিলম্ব হচ্ছে। লাইটার আসা-যাওয়া করতে না পারায় স্থবিরতা বিরাজ করছে জাহাজের পণ্য ওঠা-নামার কাজে। গত ৯ই ডিসেম্বর ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর থেকে সুন্দরবনের শেলা নদী দিয়ে ভারি নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। দীর্ঘ ১৩ দিন পার হলেও এ বিষয়ে সরকারী ভাবে স্থায়ী কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা বলছেন, বিকল্প নৌ রুট সৃষ্টি না করে শেলা নদী বন্ধ করে দেয়ায় মংলা বন্দরের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বন্ধ রয়েছে মংলা থেকে বৃহত্তর বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মালামাল পরিবহন। তাদের মতে, এসব অঞ্চলে পণ্য পরিবহনে আগে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ রুট ব্যবহার করা হতো। নাব্য সঙ্কটের কারণে ২০১১ সালে এ রুটটি বন্ধ হয়ে গেলে ভারি নৌযানগুলো শেলা নদী দিয়ে চলাচল শুরু করে। বর্তমানে এ রুটটিও বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মংলা বন্দরভিত্তিক ব্যবসায়ীরা। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে অন্য যে পথ খোলা  রয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা মংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, আর এ বন্দরের গতিশীলতায়ও ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দরসংশ্লিষ্ট মহল। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার মো. আকতারুজ্জামান জানান, রোববার মংলা বন্দরে ৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে ৬টিই সারবাহী। শেলা নদী বন্ধ থাকায় মংলা বন্দরের মালামাল বোঝাই ২০-২২টি লাইটার পশুর নদীতে নোঙর করে রয়েছে। আর সন্ন্যাসী নামক স্থানে মংলা বন্দরে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে অন্তত ৭০টি খালি লাইটার। শিগগিরই এ জটিলতার অবসান না হলে মংলা বন্দর পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে। বিসিআইসি মংলা ট্রানজিট গুদাম ইনচার্জ মো. শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, বৃহত্তর বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চলে ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয় মংলা বন্দর দিয়ে। এ বন্দরের জাহাজ থেকে লাইটারে করে এ সার পরিবহন করা হয় নদীপথে। বরিশাল, ভোলা, টেকেরহাট, বাঘাবাড়ি, আশুগঞ্জ ,কাঁচপুর, আমিন বাজার ও ঘোড়াশালসহ বিভিন্ন নৌ ঘাটে লাইটার থেকে সার খালাস করা হয়। আর মংলা বন্দর থেকে ওই সব অঞ্চলে পণ্য পরিহনের একমাত্র সহজ নৌ রুট হচ্ছে শেলা নদী। এ রুটটি বর্তমানে বন্ধ থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ওই সব অঞ্চলে সময়মতো সার পৌঁছাতে পারছে না। সার স্পর্শকাতর পণ্য হওয়ায় বন্দরে আটকে পড়া শুধু সারবাহী লাইটারগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। মংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও বিশিষ্ট শিপিং ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল বলেন, বিকল্প পথ সৃষ্টি না করে শেলা নদী বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। সুন্দরবনকে নিরাপদে রাখতে গিয়ে মংলা বন্দরকে ধ্বংস করা মোটেই উচিত নয়।
তিনি বলেন, লাইটার কোস্টার চলাচলের শেলা রুট বন্ধ করে দেয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ীরা মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। লাইটারের অভাবে বন্দরের জাহাজগুলোতে কাজ বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ আর্থিক ক্ষতির দায় নেবে কে? মংলা বন্দর রক্ষার্থে অবিলম্বে লাইটার কোস্টার চলাচলের পথ খুলে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, সরকারী সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে শেলা নৌ রুট বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরোপুরিভাবে তেল অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এবং পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এ রুট দিয়ে ভারি নৌযান চলাচল করতে দেয়া সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.