সিলেটে ক্ষোভ, আন্দোলনের হুমকি

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আসামি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন সুধীজন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর এ মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও রহস্যজনক। এ নিয়ে সিলেটবাসীর মনে নানা সন্দেহ রয়েছে। জননন্দিত অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার সবাই চায়। কিন্তু বিচারের নামে কোন ধরনের প্রহসন করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এদিকে, কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সিলেটে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরীতে বিক্ষোভ করে যুবদল। এছাড়া আন্দোলনে থাকা পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বড় পরিসরে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাভাবনা করছেন। সিলেটের সুশীল সমাজের লোকজন ও রাজনীতিবিদরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন পর মামলায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এতে করে মূল আসামিরাও রেহাই পেয়ে যেতে পারে বলেও জানান তারা। জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট ডায়াবেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ বলেন, সাবেক জননন্দিত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সুষ্ঠু বিচার হোক- এ দাবি সকলের। প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক সেটি আমাদের দাবি। কিন্তু এই চার্জশিটে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। বিষয়টি সকল মহলই দেখছে সন্দেহের চোখে। সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জশিট ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধীদের ওপর একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আরিফুল হক চৌধুরীর বিষয়টি দমন-পীড়নেরই অংশ। তিনি অবিলম্বে চার্জশিট থেকে আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিএনপি নেতাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ বলেন, এখন মামলা আদালতে। আইনি লড়াই হবে। তবে মামলায় সিলেটের জনপ্রিয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তি দুঃখজনক। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন মামলায় না অন্তর্ভুক্তি ট্রাডিশনে রূপ নেবে। এটি ভবিষ্যতে অন্যরাও করতে পারে। তিনি বলেন, এ মামলায় আরিফুল হকের না অন্তর্ভুক্তিতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অহেতুক নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সিলেট পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আতাউর রহমান পীর বলেন, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এতে সিলেটের পেশাজীবীরা ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যে সংহতি সমাবেশে দাবি জানানো হয়েছে। সিলেট এসিড সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি (এসনিক)-র সাধারণ সম্পাদক জুরেজ আবদল্লাহ গুলজার বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করায় সিলেটে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিলেটের মানুষ মনে করছে, মেয়রের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। বিক্ষোভ মিছিল: কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সচিব আবদুল হারিছ চৌধুরী ও হবিগঞ্জের মেয়র আলহাজ জি কে গউছকে সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্তি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে যুবদল সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা নগরীতে তাৎক্ষণিক এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিকালে আম্বরখানা থেকে বের হওয়া মিছিলটি নগরীর চৌহাট্টায় পুলিশি বাধা অতিক্রম করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা পয়েন্টে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন রশিদ মামুন বলেন, সিলেটের জননন্দিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হারিছ চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা ও সাজানো মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভুক্তি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সরকার তাদের কুৎসিত মেধাহীন মানসিকতা প্রকাশ করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন রশিদ মামুনের সভাপতিত্বে ও সিলেট মহানগর যুবদল নেতা শামীম মজুমদারের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদল সদস্য ও সিলেট জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাদিকুর রহমান ছাদিক, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জায়গীরদার, মামুনুর রহমান মামুন, আলী আহমদ হীরা, আলা উদ্দিন আলাই, সুলতান আহমদ বাবু, নাজমুল হাসান রিপন, আল মামুন খান, আমিনুর রহমান চৌধুরী সুয়েব, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, অধ্যাপক মঈন, হাবিবুর রহমান হাবিব, দেলোয়ার হোসেন দিলু, কামাল হোসেন লিলু, মন্তাজ হোসেন মুন্না, ছাব্বির আহমদ, আবদুস সোবহান, জেলা যুবদলের সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, মো. বাবলু, সুহেল আহমদ, মোঃ ফয়ছল, সোনাহর আলী সুহেল, কামাল আহমদ, মকসুদুল করিম নুহেল, মইনুল ইসলাম মঞ্জু, আবদুল মজিদ, আশরাফ বাহার, ফজলু মিয়া, খসরুজ্জামান, শেখ রায়হান আহমদ, শহীদ আহমদ, এম এ মুমিন, রাসেল আহমদ, আছলম মিয়া, মস্তফা মিয়া, আরব আলী, সজল আহমদ, আবদুল মালেক সুমন, জসিম উদ্দিন, তাজিল আহমদ, সানুর মিয়া, মিরাজ হোসেন, আব্দুল মালেক, ছৈয়দ আলী, কামরুল হোসেন, হেলাল মিয়া, এনাম আহমদ, আজাদ হোসেন, মো. জুম্মান, আব্দুস সাহিদ, মো. আরিফ, আবদুল হাসিম, মুহিব আহমদ, বাবুল মিয়া, আবদুল হক, বুলবুল মিয়া, রয়েল আহমদ, মো. রাফিয়ান, মো. আবদুর রহমান, মো. জসিম, মিলন দাস, সাজু শিকদার, মো. ইব্রাহিম, চুনু মিয়া, সুমন মিয়া, আলী হোসেন, রুবেল আহমদ, ফখরুল ইসলাম, হান্নান মিয়া, লেবু মিয়া, রাজু আহমদ, ফয়ছল আহমদ, রুবেল আহমদ প্রমুখ। সিলেট সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের মিছিল, প্রতিবাদ সভা: সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় বক্তারা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে গুম, খুন, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সকল নেতাকে হয়রানিমূলক মামলা যেন অবিলম্বে প্রত্যাহার করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন লিলু। প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা যুবদলের যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আলাই। বক্তব্য রাখেন, সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের অন্যতম নেতা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সূত্রাপুর থানা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মো. সোনাহর আলী সোহেল প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.