ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষিকার প্রেম অতঃপর...

ফারজানা আক্তার (৩২)। ফ্যাশন ডিজাইনের শিক্ষিকা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চার বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। তার মনোযোগী ছাত্র ছিল রিয়াজ হোসেন বাবু (২৬)। ক্লাসের পড়া নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষিকার সঙ্গে ছাত্রের যোগাযোগ। শুরু হয় মোবাইল ফোনে কথা বলা। বাড়িতে যাতায়াতও হতো। ভাল সম্পর্ক থেকে শুরু হয় ভাললাগা। তারপর প্রেম। গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক। শেষে তা গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। এক পর্যায়ে শিক্ষিকা ফারজানা তার ছাত্র বাবুকে বিয়ের চাপ দিতে থাকে। বিষয়টি দুই পরিবারের অভিভাবক পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় ছাত্রের পরিবার এই বিয়ে মেনে নিতে অস্বীকার করে। এ কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে সেই ছাত্র লাপাত্তা হয়ে গেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে শিক্ষিকা মামলা করেছেন ছাত্রের বিরুদ্ধে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ  করা হয়েছে তাকে। গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থানায় মামলাটি করেন তরুণী শিক্ষিকা। গতকাল ওই শিক্ষিকাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার বি ব্লকের ৩/৪ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন ফারজানা আক্তার। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। পড়াশোনা শেষে শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি- বিআইএফডিটিতে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের রিয়াজ হোসেন বাবু নামে শেষ বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বাবু মিরপুরের জি ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি ফ্যাশন ডিজাইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষিকা ফারজানার সঙ্গে আলোচনা করতেন। এ থেকেই তাদের যোগাযোগ শুরু হয়। এমনকি ছাত্র ওই শিক্ষিকার বাড়িতেও যাতায়াত শুরু করে। নিয়মিত মোবাইলে কথা বলা ও একসঙ্গে ঘুরেও বেড়াতো তারা। এভাবেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিষয়টি শারীরিক সম্পর্কের দিকে গড়ায়। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মুখরোচক আলোচনারও জন্ম দেয়। তাদের দুই জনকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সতর্কও করা হয়। কিন্তু, কে শোনে কার কথা। তারা আগের চেয়ে আরও বেশি মেলামেশা শুরু করেন। বিষয়টি উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যেও আলোচনা হয়। কিন্তু, ফারজানার চেয়ে বাবু বয়সে ছোট হওয়ার কারণে কোন পক্ষই তাদের এই সম্পর্ক প্রথমে মেনে নেয়নি। কিন্তু ফারজানা ক্রমাগত বাবুকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বাবুর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, পড়াশোনা শেষ এবং একটি চাকরি না পেলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। ফারজানা চাপের কারণে বাবু এক পর্যায়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। বন্ধ করে দেন নিজের সেল ফোন। আত্মগোপনে চলে যান। ফারজানা বাবুর খোঁজে তার মিরপুরের বাড়িতে যান।  বাবুর পরিবারের সদস্যরা তাকে তিরস্কার করে বের করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষিকা ফারজানা বাদী হয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর থানায় নারী নির্যাতন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা নম্বর-৪৯। রোববার দুপুরে মিরপুর থানার এসআই নওশের আলীসহ দুইজন মহিলা পুলিশ পরীক্ষার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে ফারজানার মা-ও উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা শেষে তাকে বাবা-মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়। এ বিষয়ে ফারজানা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি। ফারজানার মা সাংবাদিকদের জানান, এটা একটি ঘরোয়া ব্যাপার। ভুল  বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। ফারজানার পিতার নাম প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার রায়ের মহলের বহেরা এলাকায়। মামলার  তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই মো. আসাদ উদ্দীন জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ফারজানাকে অন্যরকম মেয়ে মনে হয়েছে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রের মিরপুরের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ফারজানার সঙ্গে যেন বাবুর বিয়ে হয় এজন্য বাবুর পরিবার রাজি হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে পুলিশ তার আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে। মামলার পর থেকেই বাবুর মোবাইল বন্ধ আছে। মোবাইল ট্র্যাকিং করে তাকে আটকের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.