গাজীপুর সমাবেশ ঘিরে মুখোমুখি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আগামী ২৭শে ডিসেম্বর গাজীপুরের সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে খালেদা জিয়াকে কোথাও সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ছাত্রলীগ। ওদিকে ছাত্রলীগকে প্রতিহত করে যে কোন মূল্যে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। একই সঙ্গে  খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে সব কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। নইলে রাজপথে গণধোলাই দিয়ে ছাত্রলীগকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখানোর হুমকি দিয়েছে তারা। গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ হুমকি দেন। ছাত্রলীগের ‘অশ্লীল’ বক্তব্য এবং গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহতের ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্রদল এ সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে আকরামুল হাসান বলেন, খালেদা জিয়ার সমাবেশকে প্রতিহত করার ঘোষণার পরিণাম কি ভয়াবহ হতে পারে ছাত্রলীগকে তা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানাই। গাজীপুরে নির্দিষ্ট তারিখে নির্ধারিত জায়গায়ই খালেদা জিয়ার জনসভা হবে। এর জন্য যে ভাষায় কথা বলা দরকার, যে পদ্ধতিতে কাজ করার দরকার, তা করতে ছাত্রদল বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, তারেক রহমান ইতিহাসের ‘সত্য’ তুলে ধরায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গায়ে জ্বালা শুরু হয়েছে। অথচ এ কথাগুলো তারেক রহমানের নিজের বক্তব্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও গবেষকদের গবেষণা থেকে এ সব সত্য বেরিয়ে এসেছে। এসব লেখকের বেশির ভাগই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সমপ্রতি মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি একে খন্দকার ও তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদসহ অনেক লেখকের গবেষণায়ও এর প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনে অরাজক পরিস্থিতির জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে ছাত্রদল সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুনের ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৫০ জন ছাত্র নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সারা দেশে যে খুনের রাজত্ব কায়েম করেছেন সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগও দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধাবী ছাত্রদের একের পর এক খুন করে নিজেদের হাত রক্তে রঞ্জিত করছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান। তিনি বলেন, আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছাত্রদল ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী আন্দোলনে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে মাঠে থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, দেশে গণতন্ত্রমনা প্রগতিশীল যত ছাত্র সংগঠন আছে, সকলের সঙ্গেই আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। প্রয়োজনে হাসিনা পতন আন্দোলনে এসব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছাত্রদল ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাজিব জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। শিগগিরিই কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ সময় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, তারেক উজ্জামান তারেক, নাজমুল হাসান, মামুন বিল্লাহ, ইখতিয়ার রহমান কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য প্রত্যাহার  করলে খালেদা জিয়াকে কোথাও সমাবেশে করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। গতকাল মানবজমিনকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমান যেসব কটূক্তি করেছেন তা প্রত্যাহার হলেই কেবল খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে। অন্যথায় দেশের প্রতিটি জায়গায় তার সমাবেশ প্রতিহত করা হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ একই স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুমতিও চেয়েছে। তাহলে কি খালেদা জিয়ার সমাবেশে প্রতিহত করার ঘোষণায় ছাত্রলীগ অনড়- এমন প্রশ্নে সোহাগ বলেন, অনুমতি চেয়েছি দেখি কে পায়। ছাত্রলীগ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিচ্ছে। ছাত্রদলের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তাদের ব্যাপারে আমরা কখনও শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দেইনি। বরং তারেক রহমান ও বিএনপি নেতারা শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.