জানুয়ারি থেকেই সিরিজ কর্মসূচি বিএনপি’র

৫ই জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও প্রাথমিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে একতরফা নির্বাচনের দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিচ্ছেন বিরোধী নেতারা। সেদিন থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের যাত্রা শুরুর ব্যাপারে ২০ দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই। বিএনপি এবং জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে প্রস্তুতি চলছে সমানে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে রোড ম্যাপ তৈরি করে প্রাথমিকভাবে আগামী ২রা ও ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে জনসভা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। গুম-খুনের প্রতিবাদে ২রা জানুয়ারি ও ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে ৫ই জানুয়ারির জনসভা করতে চায় বিরোধী জোট। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়াপল্টন বা পল্টন ময়দানে এ সমাবেশের জন্য দু’-তিন দিন আগে অনুমতি চাইবে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি না পেলে ঘোষণা আসতে পারে ৫ই জানুয়ারি থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা হরতালের। তবে আগামী ২৭শে ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশের পর রাজধানীতে জনসভা কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। ২৭শে ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভায় আন্দোলনের পক্ষে আরও জোরালো বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। পরে জোটের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দিতে পারেন। আর সমাবেশের অনুমতি না পেলে টানা হরতাল বা অন্য কড়া কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খোদ বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া। এদিকে আগামী ২৪শে ডিসেম্বর বিশেষ আদালতে দু’টি মামলায় হাজিরার দিন ও গাজীপুরের সমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিতেও নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওদিকে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে দেয়া এক বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার জনসভায় বাধা দেয়া হলে ওই দিনই সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ২০ দলীয় জোট।
সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে সম্ভাব্য কিছু কর্মসূচির প্রস্তাবনাও এসেছে সিনিয়র নেতা ও শরিক দলগুলোর তরফে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর তিনি আন্দোলন ইস্যুতে প্রস্তাবিত কৌশল ও কর্মসূচি নিয়ে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। সরকারকে পাল্টা কৌশলের সুযোগ না দিতেই আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়টি কয়েকজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। ফলে সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে অস্পষ্টতার মধ্যে ছিলেন খোদ বিরোধী নেতারাই। তবে দলের সিনিয়র নেতারা জানান, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ইস্যুর মাধ্যমেই চূড়ান্ত আন্দোলনের যাত্রা শুরু করতে চায় ২০দল। বিরোধী নেতারা একমত হয়েছিলেন সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালেই চূড়ান্ত আন্দোলনে পা বাড়াবেন তারা। কয়েকটি জনসভায় খোদ বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া নিজেই বলেন, সরকার তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে পরদিন থেকেই টানা কর্মসূচি দেবে ২০ দল। তবে সরকার এখন পর্যন্ত দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত জনসভা এবং ঘরোয়া মতবিনিময় সভাগুলোতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তিনি বিএনপি ও জোট নেতাকর্মীদের অব্যাহতভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্দোলনে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসীর প্রতি। দলের সিনিয়র নেতা ও জোটের নেতাদের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ঘোষিত যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বারবার বলেছেন, প্রস্তুতি নিন, যে কোন দিন আন্দোলনের ডাক দেবো। সর্বশেষ রোববার রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ সংগঠিত করার সময় এসেছে। বিজয়ের মাসে সে প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। আর বসে থাকার আর কোন উপায় নেই। দেশের জনগণ আন্দোলন চায়, পরিবর্তন চায়। তারা বিএনপি ও ২০ দলের প্রতি আন্দোলন করার জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে। আমি যেখানেই যাচ্ছি, দলে দলে লোক এসে আন্দোলনের দাবি জানাচ্ছে। কাজেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদেরকে আন্দোলন শুরু করতে হবে। আমরা অস্ত্রের মোকাবিলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে নামবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের সার্বিক প্রস্তুতি ও কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের ৫ নেতার সঙ্গে শনিবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর। বৈঠকে দু’টি জনসভা করা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়লে সম্ভাব্য কড়া কর্মসূচির একটি গুচ্ছ প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। জনসভা ছাড়াও ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলী, টঙ্গী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ১৫ মিনিট অবস্থানের মাধ্যমে সরকারের প্রতি ক্রসচিহ্ন প্রদর্শন, রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিলসহ আরও কয়েকটি শান্তিপূর্ণ এবং টানা তিনদিনের অবরোধের মতো কড়া কর্মসূচিও রয়েছে সে প্রস্তাবনায়। এছাড়া বৈঠকে ঢাকা মহানগর নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। গুলশানের বাসভবনে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রুদ্বদ্ধার এ বৈঠকে অংশ নেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মহানগর সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এরই খালেদা জিয়া তার বিশ্বস্ত কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া প্রস্তাবিত গুচ্ছ কর্মসূচিটি চূড়ান্ত করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে গতকাল সকালে শরিক দলের মহানগর পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নয়াপল্টন কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। বিএনপি নেতারা জানান, সরকারকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জনদাবির প্রতি ন্যূনতম ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই।  সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে শিগগিরই রাজপথে নামবে ২০ দল।

No comments

Powered by Blogger.