পাকিস্তানে অর্ধশতাধিক জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে

পাকিস্তানের পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবানের ভয়াবহ হামলার জের ধরে দেশটিতে শিগগিরই আরও অর্ধশতাধিক জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে চলেছে। গত সপ্তায় সংঘটিত ওই হামলার ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে অন্তত ছয়জনের। এ ছাড়া হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর বিবিসি, এএফপি ও ডনের।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর দায়ে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কমপক্ষে ৫৫ জনের প্রাণভিক্ষার আবেদন সম্প্রতি নাকচ করে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেইন। এর ফলে সম্ভবত আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গি হামলার পরের দিন পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২০১২ সালের পর থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগ পর্যন্ত এই ৫৫ জনের প্রাণভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করা না-করার বিষয়টি ঝুলে ছিল।
এই ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি কার্যত আন্তর্জাতিক চাপের কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সরকার ক্ষমতায় এসেও মূলত একই কারণে বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। তাই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি তাঁদের ফাঁসির আদেশও।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছে। এরপর তাঁদের ফাঁসি দেওয়া হবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাঁচ শতাধিক লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
সাধারণত পাকিস্তানে ক্ষমার আবেদন নাকচ ও মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর দণ্ড কার্যকরে অন্তত ১৪ দিন সময় লাগে। তবে পাঞ্জাব সরকার সম্প্রতি আইন সংশোধন করে এই সময় দুই দিন করেছে। প্রদেশটির সরকার আরও একটি আইন সংশোধন করেছে। যার ফলে মৃত্যুদণ্ড কেবল ভোর চারটায় কার্যকর করা হবে। এত দিন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যেকোনো সময় ফাঁসিতে ঝোলানো যেত।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ: সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসংশ্লিষ্ট যেসব মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, সেসব মামলায় সক্রিয় হয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে আনতে লেগে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল সালমান আসলাম বাট ও তাঁর দলকে এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কর্মকর্তারা জানান, এই নির্দেশের পর সরকারি কৌঁসুলিরা সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাবেন, যাতে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়।
ওদিকে ২০১২ সালে গুজরাটে এক সেনাশিবিরে হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া পাঁচ ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত করে দিয়েছেন লাহোর হাইকোর্ট। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আইনজীবীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই স্থগিতাদেশ দেন আদালত। একই দিন আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন সিন্ধু হাইকোর্টও।
কয়েকজনকে গ্রেপ্তার: পুলিশ বলছে, পেশোয়ারের স্কুলে নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী বলেন, এরা ওই হামলার ‘প্রশ্রয়দাতা’। তবে এদের সংখ্যা বা পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান তিনি। মন্ত্রী দাবি করেন, আরেকটি হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে গোয়েন্দা তথ্যে তাঁরা আভাস পেয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, গতকাল কোয়েটার কুচলাক এলাকা থেকে তালেবানের একজন প্রভাবশালী কমান্ডারসহ সন্দেহভাজন পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
পিটিআইয়ের নিন্দা: পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান গত রোববার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও অন্য সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিন্দা করেছেন। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে তালেবানের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে যে সাধারণ ভাবমূর্তি প্রচলিত রয়েছে সেটি হালকা করতেই একে ইমরানের একটা চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.