৫০০ জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলাবে পাকিস্তান

পাকিস্তান সরকার অন্তত ৫০০ জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে। আগামী সপ্তাহেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। সোমবার সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫০০ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার তালিকা চূড়ান্ত করেছে। বিধি অনুযায়ী তারা প্রাণভিক্ষা করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়ে আগামী সপ্তাহেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য একজন কর্মকর্তা এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে এক প্রশ্নের উত্তরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছিলেন, পাঁচ শতাধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। এ ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে প্রেসিডেন্টের বরাবর কোনো প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা পড়েনি। এ ব্যাপারে সাবেক বিচারপতি তারেক মাহমুদ বলেন, এর মানে এই নয় যে, কয়েকদিনের মধ্যে ৫০০ আসামিকে ফাঁসি দেয়া হবে। এর মধ্যে অনেক রায়ই নিু আদালত বা হাইকোর্টের। এগুলো আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টে যাবে। তারপর সেখানে পুনঃরায় ঘোষণা করা হবে। এদিকে রোববার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসাইন অন্তত ৫৫ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। রোববার প্রেসিডেন্ট ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১২ সালে ওই আসামিরা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে স্থগিতাদেশ বজায় থাকায় জারদারি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। ওই কর্মকর্তা জানান, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি বা প্রত্যাখ্যান কোনোটাতেই স্বাক্ষর করেননি। খবর ডন নিউজ।
গত ছয় বছরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত আট হাজার আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ফাঁসি কার্যকর করেনি পাকিস্তান। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক দিনে ফাঁসি কার্যকর করা ছয়জনের বাইরেও আরও অন্তত ৫৫ জঙ্গির ক্ষমাভিক্ষার আবেদন ২০১২ সাল থেকে ঝুলে ছিল। আন্তর্জাতিক চাপের ভয়েই তখনকার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ওই ৫৫ জনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে ধারণা করা হয়। দেশটির নিয়মানুযায়ী প্রেসিডেন্টের প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যানের ন্যূনতম ১৪ দিন পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি পাঞ্জাব সরকার আইনটি পরিবর্তন করে কার্যকরের মেয়াদ দু’দিনে এনেছে। এছাড়া ফাঁসিতে ঝুলানোর নির্দিষ্ট সময়ও পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৪টায় ফাঁসি কার্যকর করা হলেও বর্তমানে যে কোনো সময়ই তা করা যাবে। গত ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবান হামলায় অন্তত ১৪১ জন নিহতের ঘটনার পর দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ছয় বছর ধরে চলমান স্থগিতাদেশ তুলে নেয় সরকার।
নিষেধাজ্ঞা তোলার তিনদিনের মাথায় রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দফতরে হামলা ও পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ড. উসমান ওরফে আকিল এবং আরশাদ মেহমুদ নামের দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এদিকে দেশটির ফয়সালাবাদ জেলা কারাগারে রোববার রাতেই চার আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যারা সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এ চারজন হলেন- জুবাইর আহমেদ, রশিদ কুরেশি, গুলাম সারোয়ার ভাত্তি এবং আখলাক আহমেদ নামের এক রুশ নাগরিক।
৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত : পাকিস্তানের গুজরাট শহরে ২০১২ সালে সেনাবাহিনীর একটি শিবিরে হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। লাহোর হাইকোর্টের রাওয়ালপিন্ডি বেঞ্চ সোমবার এ স্থগিতাদেশ জারি করেন। খবর ডন নিউজের। এক অভিযুক্তের পক্ষে তার আইনজীবীর দায়ের করা পিটিশনের ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেয়া হল। অ্যাডভোকেট লেইক খান স্বাতীর করা এক পিটিশনের শুনানির পর বিচারক আরশাদ মাহমুদ এ নির্দেশ দেন। পিটিশনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আহসান আজিমের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। গুজরাট শহরের এক সেনা শিবিরে হামলার অভিযোগে ২০১২ সালে সামরিক আদালতে কামরান, উমর নাদিম, আহসান আজিম, আমির ইউসুফ ও আসিফ ইদরিসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.