প্রাণ ফিরে পেয়েছে আচেহ

সাজানো-গোছানো সুন্দর এই জায়গাটি ইন্দোনেশিয়ার আচেহ
প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহর পশ্চিম উপকূল। ২০০৪
সালের সুনামিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এই সৌন্দর্য।
২০০৪ সালে ভয়াবহ সুনামির পর পুরো লোখাঙ্গা গ্রামটি মাটিতে মিশে গিয়েছিল। গ্রাম থেকে দূরের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। দুই কিলোমিটার দূরের সমুদ্র, পেছনে আচেহর আঞ্চলিক রাজধানী বানদা আচেহও স্পষ্ট। গোটা গ্রাম কাদায় ভরপুর। ধ্বংসের চিহ্ন চতুর্দিকে। রাস্তা রাস্তায় পড়ে ছিল অসংখ্য লাশ। আর এর সঙ্গে ছিল মানুষের সীমাহীন কষ্টের চিহ্ন। ১০ বছর পরের লোখাঙ্গাকে চেনা বেশ মুশকিল। গাছগুলো এত দ্রুত ১০ বছরে বেড়ে উঠেছে, মনে হয় যেন ছোট্ট এ গ্রামটি গাঢ় সবুজ পর্দায় ঢাকা পড়েছে। খবর বিবিসির। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামি আঘাত হানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূলে। সেই সুনামির আঘাতে লোখাঙ্গার মতো অজস্র গ্রাম ধ্বংস হয়। সুনামির পরপরই লোখাঙ্গার বেঁচে থাকা মানুষদের আশ্রয়স্থল ছিল কাছের মসজিদের ধ্বংসাবশেষে তৈরি একটি ক্যাম্প। সেই সময় ১১ বছরের মাওয়ারদা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা হয়।
৩৫ মিটার উঁচু ঢেউয়ের তোড়ে ওর মা-বাবা দুজনই ভেসে যান। সুনামির আঘাত হানার বেশ কয়েক দিন পর মাওয়ারদা ওর বড় বোন মুতিয়াকে (১৬) খুঁজে পায়। লোকে ঠাসা ক্যাম্প থেকে ওরা একসময় নিজস্ব তাঁবু পায়। পরে ধীরে ধীরে ইট আর কাঠের তৈরি বাড়িতে জীবন গড়ে তোলে ওরা। এক িব্রটিশ সাহায্য সংস্থা বাড়িটি তৈরি করে দিয়েছিল। মাওয়ারদা স্কুলে ফিরে যায়। ওর বোন মুতিয়ার বিয়ে হয়। ওদের সবার বড় বোন ইটা লোখাঙ্গাতে ফিরে আসে। সুনামির ধ্বংসের পর আবার নতুন জীবন পেয়েছে মাওয়ারদা। নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুরো আচেহ। বিধ্বংসী সুনামি মাওয়ারদার মা-বাবাকে শুধু কেড়ে নেয়নি, সেই সঙ্গে চলে গেছে তাদের সব স্মৃতিও। মা-বাবার ছবি, তাঁদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র—সবই সুনামির পানিতে ধুয়ে-মুছে গেছে। তবে ২১ বছরের মাওয়ারদা হেরে যাননি। আজকের ২১ বছরের মাওয়ারদা অনেক আস্থাশীল, চৌকস আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সুনামির পর আন্তর্জাতিক সহয়তা এসেছে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থে যে বাড়ি তৈরি হয়েছে, তা ২০০৪ সালের বাড়ির চেয়ে অনেক ভালো, স্বীকার করছেন স্থানীয় লোকজন। সুনামির মহাদুর্বিপাকের আগে আচেহতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল তীব্র। সুনামি সেই সশস্ত্র আন্দোলন ছেড়ে শান্তির পথে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ওই দুর্যোগের পরপরই শান্তি আলোচনা শুরু হয়। নতুন সরকার গঠিত হয়। শান্তির সেই সুবাতাস মাওয়ারদাকেও করেছে আত্মবিশ্বাসী।

No comments

Powered by Blogger.