অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার বাস্তবায়ন চান কর্মচারীরা

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পূর্বঘোষিত সময়সীমা থেকে সরে আসায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের নেতারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই আগামী অর্থবছর থেকে নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন মেনে নেবেন না। সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর দেয়া বাজেট বক্তৃতার ঘোষণা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে অবসর-পরবর্তী এক বছরের ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে যুগান্তরে টেলিফোন করে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হলে তারা এর কোনো সুবিধা পাবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন করা হলে অনেকেই নতুন বেতন কাঠামোর সুবিধা পাবেন। তারা বলেন, নিয়মানুযায়ী সরকার প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে থাকে। সে মোতাবেক ২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তাই এই সময়কালে যারা অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছেন তাদেরও নতুন পে-স্কেল ভোগ করার অধিকার রয়েছে। অপর একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাদের বঞ্চিত করা হলে তারা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করবেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ১৪০নং অনুচ্ছেদে (৬৭ পৃষ্ঠা) অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর হতেই নতুন বেতন কাঠামো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করব।
অথচ রোববার সচিবালয়ে পে-কমিশনের পক্ষ থেকে রিপোর্ট দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবী নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সরকারের বেতন বাবদ খরচ বাড়বে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চলে যাচ্ছে আগামী (২০১৫-১৬) অর্থবছরে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পিআরএলের (অবসরোত্তর ছুটি ভোগের এক বছর) সময়সীমা আগামী ৩০ জুন শেষ হলে তিনিও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এদিকে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার ঘোষণা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর থেকে প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন দেখতে চান। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর নতুন বক্তব্য অনুযায়ী আগামী অর্থবছর থেকে নতুন পে-স্কেল দেয়া হলে কর্মচারীদের অনেক ক্ষতি হবে। এ নেতা বলেন, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে মূল বেতন ভূতাপেক্ষভাবে এবং আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে অন্যান্য ভাতা কার্যকর করতে হবে। এভাবে পে-স্কেল বাস্তবায়ন করার নজির অতীতেও রয়েছে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মুখপাত্র ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বখতিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী নতুন পে-স্কেল চলতি অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। সাধারণ কর্মচারীরা এটাই চান। এ ক্ষেত্রে ভূতাপেক্ষভাবে জুলাই থেকে শুরু না হলেও আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করা উচিত।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব নোমানুজ্জামান আল আজাদ বলেন, প্রথমত : অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা চলতি অর্থবছরের মধ্যে এই পে-স্কেলের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দ্বিতীয়ত : প্রস্তাবিত পে-স্কেলে বিদ্যমান বেতনবৈষম্য মোটেই দূর হয়নি। বর্তমান বেতনবৈষম্যের ব্যবধান ১:১০। পে-কমিশন ঘোষিত প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতেও একই হার রয়ে গেছে। বরং আরও কিছুটা বেড়েছে। তারা এ ব্যবধান ১:৫ দেখতে চান।
সচিবালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, তারা ২০১৪ সালের জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেলের বাস্তবায়ন চান। বেতনবৈষম্যের হারও কমাতে হবে। এ ছাড়া শুনেছি এই পে-স্কেল থেকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা কেটে নেয়া হচ্ছে। যদি এ তথ্য সঠিক হয় তাহলে তারা এটি কোনোভাবে মেনে নেবেন না।

No comments

Powered by Blogger.