৫ জানুয়ারির নির্বাচন আদর্শ নয় বৈধ : পিনাক

বাংলাদেশে ভারতের দুই সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ও পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হবে। ২৪ নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের এই অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পাদন করেছে।
যুগান্তরকে দেয়া পৃথক একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক এ দুই হাইকমিশনার তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির মতো দুটি অমীমাংসিত ইস্যুতে অভিন্ন মত প্রকাশ করেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যারা ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন তাদের এক সম্মেলনে যোগ দিতে বীণা সিক্রি ও পিনাক চক্রবর্তী এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার থেকে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
বীণা সিক্রি বলেন, ভারতে কংগ্রেস সরকার তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষ দুবছরে এই চুক্তি বাস্তবায়নে কংগ্রেস তেমন কোনো কাজই করেনি। সে তুলনায় মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছে। কংগ্রেস রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়ায় সীমান্ত চুক্তি পাস হয়নি। বিজেপি রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে অনেক কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন, তিস্তার ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। কংগ্রেস তেমন কিছুই করেনি। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক পর্যন্ত করেনি। বিজেপি তিস্তা চুক্তিও করবে। তবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়াটা খুবই জরুরি। এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। এতে করে শুকনো মৌসুমে অনেক পানি আসতে পারবে।
তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির ইস্যুতে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির ইস্যু নিষ্পত্তি করেই বাংলাদেশ সফরে আসতে চাইছেন। এই দুই ইস্যুর নিষ্পত্তি না করে বাংলাদেশ সফরে এলে তার সামনে প্রশ্ন উঠবে- এগুলো কেন হচ্ছে না। এমন প্রশ্ন পরিহার করাই মোদির লক্ষ্য।
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে জোরদার সহযোগিতা প্রয়োজন মন্তব্য করে বীণা সিক্রি বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি দমনে ভারতকে শেখ হাসিনার সরকার উদারভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন ভারতে জেএমবি যে বোমা বানাচ্ছিল সেটার উদ্দেশ্য ছিল অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন ইস্যুতে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বর্ধমানে জঙ্গিরা যে বোমা বানাচ্ছিল সেগুলো ব্যবহার করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার ছক তৈরি করেছিল জেএমবি। এ কথাই বলছে বিষয়টি তদন্তে নিয়োজিত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্ত সংস্থা এনআইএ। জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি এখন অনেক বেশি। একসময় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে জঙ্গি তৈরি করা হতো। এখন এই রেডিক্যালিজম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জঙ্গিরা এখন ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার করে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
সাইবার দুনিয়া থেকেও নিরাপত্তা হুমকি আসতে পারে বলে মনে করেন পিনাক। তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে জরুরি ভিত্তিতে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার ও তথ্যের আদান-প্রদান করা প্রয়োজন। জঙ্গি অর্থ কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছে সেটাও দেখতে হবে। এনআইএ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এলে তারা তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য প্রদান করবে। যেসব জঙ্গি ধরা পড়ছে তাদের দেয়া তথ্যও পাওয়া যাবে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন আদর্শ নয়, বৈধ : পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে আদর্শ নির্বাচন বলে মনে করেন না। তবে তার মতে, ওই নির্বাচনটি ছিল বৈধ নির্বাচন। পিনাক চক্রবর্তী বলেন, আমি মনে করি, সবার অংশগ্রহণে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটাই হল আদর্শ নির্বাচন। তবে বাংলাদেশে যে ধরনের সরকারই থাকুক, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। প্রতিবেশী হিসেবে সম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া ভারতের এখানে কোনো পছন্দ নেই।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, দেখুন, ভারতে নির্বাচনের পর পরই মোদি সরাসরি মনমোহন সিংয়ের কাছে গিয়েছেন। মোদি বলেছেন, আপনি ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, আপনার অভিজ্ঞতা আমার জানা প্রয়োজন। এই রকম একটা পরিবেশ বাংলাদেশে হলে ভালো হয়। এখানে নির্বাচনে এক পার্টি জিতবে, এক পার্টি হারবে। এটা নিয়ে বসে থাকা যায় না।
একই কথা বীণা সিক্রিরও। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা বহাল থাকুক, এটা মোদি চান। সেই গণতন্ত্রের ধারা বজায় রাখতে হলে সময়মতো নির্বাচন করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা সেই সময়মতো নির্বাচন করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যা হয়েছিল। সেখানে সময়মতো নির্বাচন করতে এর মধ্যেই ভোট করতে হয়েছে এবং সেই ভোটে সবাই অংশ নিয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থাকতে শেখ হাসিনা এই নির্বাচন করেছেন।
দুই ইস্যুতে পাকিস্তানি মানসিকতা! : দুটি ইস্যুতে বাংলাদেশে এখনও পাকিস্তানি মানসিকতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বীণা সিক্রি। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পাকিস্তান ভারতকে ট্রানজিট দেয়া এবং পাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালেও বাংলাদেশে এই দুই ইস্যুতে পাকিস্তানের মানসিকতা রয়ে গেছে। তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশে এখন আর পাকিস্তানি মানসিকতা নেই। শুধু এই দুই ইস্যুতেই পাকিস্তানি মানসিকতা রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যোগাযোগের ইস্যুকে ট্রানজিট ইস্যু বলে চালিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এটা এখন আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ইস্যু হিসেবে বিবেচ্য। অনেক দিন পর ঢাকায় এসে অনেক দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের পাশাপাশি দিল্লির মতো ঢাকাতেও মেট্রোরেল চালু করতে হবে। বাস দিয়ে যানজট কমানো যাবে না। মেট্রোরেলের পথেই হাঁটতে হবে। তবে তিনি কি কোনো অদৃশ্য পরিবর্তন উপলব্ধি করছেন- এই প্রশ্নে বাঙালি পিনাক হাসতে হাসতে বলেন, সবে তো এলাম, আরও একটু থাকি, তখন বুঝব!

No comments

Powered by Blogger.