চালকের আসনে বাংলাদেশই

প্রথম দুই টেস্টে দু’টি করে চার উইকেট। অথচ ঢাকা আর খুলনার দুই টেস্টেই ছিল স্পিনারদের দাপট। প্রথমটিতে তাইজুল ইনিংসে ৮ উইকেট নেন আর দ্বিতীয় টেস্টের দু’ইনিংসেই ৫ উইকেট করে নেন সাকিব আল হাসান। তাই তরুণ স্পিনার জুবায়ের হোসেনের ওপর চাপ একটু বেশিই ছিল। তবে মনে মনে প্রত্যয় ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। বয়স ২০ পুরো হয়নি, তাতে কি! বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দলে প্রকৃত লেগ স্পিনার হিসেবে অনেক আশা-ভরসার নাম জুবায়ের। শেষ পর্যন্ত আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন তিনি। চট্টগ্রামে এসে যেন নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেন জামালপুরের ছেলে জুবায়ের। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল না তার। গতকাল বাংলাদেশ দলের বোলাররা যখন উইকেটের জন্য খাবি খাচ্ছিলেন তখন সাফল্যে উদ্ভাসিত হলেন জুবায়ের। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে তার ৫ উইকেট পাওয়ার সুবাদেই। যেভাবে সিকান্দার রাজা আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১৬০ রানের জুটি গড়ে দিয়েছিলেন তাতে হতাশাই ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। মাসাকাদজাকে আউট করে দিনের প্রথম আঘাতটা হানেন সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া পেসার শফিউল। কিন্তু এর পরপরই এক ওভারে  অধিনায়ক টেইলর ও সিকান্দারকে ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন জুবায়ের। সফরকারীদের কোমরটা ভেঙে যায় এখানেই। এর পর সেঞ্চুরির পথে যাওয়া চিগুম্বুরার চারবার জীবন পাওয়া ইনিংসও শেষ হয় তার বলে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার বল করে ৯৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট দখল করেন জুবায়ের। তাইজুল-সাকিবের চেয়ে রান একটু বেশিই দিয়েছেন তিনি। তবে তাতে দুঃখ নেই কারও। ডানহাতি এ লেগ স্পিনারের কল্যাণেই জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়ে যায় ৩৭৪ রানে। ৫০৩ রান করা বাংলাদেশ তখন ১২৯ রানে এগিয়ে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৯ ওভার ব্যাট করে ২৩ রান তুলে। ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১৫২ রানে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টেস্টও তৃতীয় দিন শেষে বলতে পারেন বাংলাদেশই চালকের আসনে। বাংলাদেশ যেভাবে চালাতে পারবে সেভাবেই চলবে চট্টগ্রাম টেস্টের গতি। সব কিছু ঠিকমতো হলে ৩-০ ব্যবধানের স্বপ্নপূরণ করতে পারবে মুশফিক বাহিনী।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কিভাবে? খেলার তো এখনও দু’দিন বাকি। হ্যাঁ আশার আলো এখানেই। বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই, সাদা চোখেই বলা যায়, আজ যদি বাংলাদেশ মাত্র আড়াই শ’ রান করতে পারে তবে জিম্বাবুয়ে পালাবার পথ পাবে না। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের মাটিতে ফর্মে থাকা তিন স্পিনারকে মোকাবিলা করে ৪০০ রান করা পাহাড় ঠেলারই সামিল। পঞ্চম দিনে  নিশ্চয়ই পিচ এ রকম থাকবে না। সাকিব-তাইজুলের পর জুবায়েরও পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন। সঙ্গে আছেন রুবেল ও শফিউল। তাই জিম্বাবুয়ের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস যতই থাকুক কঠিন বাস্তবতাই অপেক্ষা করছে।
তবে পরীক্ষাটা আজ স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। তামিম-ইমরুল যদি প্রথম ইনিংসের মতো একটা নিখাদ উদ্বোধনী জুটি গড়ে দিতে পারেন তবে তো কথাই নেই। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান শুরুটাও বেশ সাবধানে করেছেন। গতকাল তামিম ২৪ বলে ৮ আর ইমরুল ৩০ বলে ১১ রান করেছেন। তামিম কোন চার মারেননি, ইমরুল দু’টি। সফরকারীদের পেসাররা প্রথম ইনিংসে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তাদের খণ্ডকালীন বোলার সিকান্দার রাজা আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজার কাছেই পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাবধানী হলে তাদের মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। কে জানে, পুরো সিরিজে ম্লান ব্যাটিংয়ের জবাবটা এ ইনিংসেই দিয়ে দিতে পারেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। তামিম, সাকিব, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে শামসুরের পরিবর্তে নামা ইমরুলও শতরানে উজ্জ্বল। অথচ ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে করা ৬৪ রান বাদ দিলে পরের চার ইনিংসে মুশফিকের সংগ্রহ ২৩, ১১, ০ ও ১৫=৪৯। হঠাৎ ছন্দ পতন না হলে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের এই ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ২৫০ রান খুব বেশি চাওয়া নয়। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার স্বপ্ন এখনও ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখতেই পারেন।

No comments

Powered by Blogger.