কিবরিয়া হত্যা- সিলেটে ক্ষোভ মদতদাতা চিহ্নিত চায় পরিবার

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় দেয়া সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। হবিগঞ্জের পৌর মেয়রকে চার্জশিটে জড়ানোয় জেলা শহরে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে চার্জশিটে জড়ানোয় সংবাদ সম্মেলন করে রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও প্রয়াত অর্থমন্ত্রীর পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া জানিয়েছেন, চার্জশিটে ঘটনার মদতদাতাদের চিহ্নিত না করলে তারা এই চার্জশিট মানবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা ড. রেজা জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন তার মা আসমা কিবরিয়াকে নিয়ে আগামী ২০শে নভেম্বর দেশে ফিরবেন। এরপরই পারিবারিকভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তিনি বলেন, আসল মদতদাতাদের চিহ্নিত না করলে আমরা এ চার্জশিট মানব না। কয়েকজনের নাম আমরা সবসময় বলে আসছি। দেখতে হবে চার্জশিটে তাদের নাম আছে কি-না। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইমদাদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি-না সেটি আমাদের সন্দেহ।
সিলেট অফিস জানায়, কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে নতুন করে বিএনপির নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের নেতারা। তারা বলেছেন, সিআইডি আলোচিত এ মামলার যে সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে সেটিতেও আপত্তি রয়েছে নিহত কিবরিয়ার পরিবারের। তারাও এ তদন্তে সন্তুষ্ট নন। সুতরাং এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, সরকার আলোচিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে রাজনীতি করছে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বিকালে সিলেটের একটি হোটেলে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। এ সময় তিনি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, কিবরিয়া হত্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। যদি এ কর্মসূচিতে সরকার বাধা প্রদান করে তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় নতুন করে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ সিলেট ও হবিগঞ্জের সিনিয়র নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিশেষ করে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করায় বেশি ক্ষুব্ধ তারা। এজন্য চার্জশিট প্রদানের পরদিনই শুক্রবার বিকালে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার একটি অবৈধ সরকার। ৫ই জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের পর থেকে সরকার দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তারা জনসমর্থন সংকটে ভোগার কারণে  এখন দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার প্রথমে ঢাকায় বিরোধীদলীয় নেতাদের শায়েস্তা করতে মামলা দিয়েছে। এখন তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে নজর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আদালতে দেয়া সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের নেতা জিকে গউছ সহ নতুন করে ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ সম্পূরক চার্জশিটের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান শমসের মবিন।
তিনি বলেন, সম্পূরক চার্জশিটে পরিকল্পিতভাবে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ অন্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ চার্জশিটে খুশি নন নিহত কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াও। সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় সরকার ইচ্ছে মতো বিরোধী দলের নেতাদের ঘায়েল করতে এ চার্জশিট প্রদান করেছে। এজন্য আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। আর এই আন্দোলন কর্মসূচি পালনে বিএনপির সব অংশের নেতারা এক যোগে মাঠে নামবে বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট নুরুল হক, সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দিলদার হোসেন সেলিম, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট আবদুল গফ্‌ফার, সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি নাসিম হোসাইন, এডভোকেট নোমান মাহমুদ, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাহের শামীম ও আলী আহমদ, মহানগরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেক, মহানগর নেতা ডা.  নাজমুল ইসলাম, মহবুব চৌধুরী সহ সিনিয়র নেতারা।
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে সম্পৃক্ত করার প্রতিবাদে হবিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় যুবদল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে শহরের পৌরসভার সামন থেকে মিছিলটি শুরু করে তিনকোনা পুকুরপাড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করা হয়। পরে জেলা যুবদলের সভাপতি আজিজুর রহমান কাজলের সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদের পরিচালনায় এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. ইলিয়াছ, জেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান বাচ্চুু, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ, যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নানু, জেলা ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ইমরান, মতিউর রহমান মতি, কামাল শিকদার, শাহ মশিউর রহমান কামাল, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, এড. আবদুল কাদির, সালাউদ্দিন ফারুক, শেখ মখলিছুর রহমান, হারিছ আহমেদ চৌধুরী, শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, তাউছ মিয়া, মাহমুদুল হাসান, অলিউর রহমান মেম্বার, শফিকুল ইসলাম সফিক, শারফিন চৌধুরী রিয়াজ, হেলাল আহমেদ টিপু, মঞ্জুর উদ্দিন মঞ্জু, এনামুল হক চৌধুরী, এসএম মওলা, শাহজাহান মিয়া, পায়েল আহমেদ রিপন, মোস্তাফ আহমেদ, হোসাইন আহমেদ রানা, সিরাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, তারেক আহমেদ, মহিবুর রহমান শাওন, হাবিবুর রহমান রিংকু, ইমরানুল হক ইমরান, রুমেল খান চৌধুরী, সজীব আহমেদ, মেহদি হাসান, সাইফুল আলম, এমএ হান্নান, এনামুল হক সায়েম, তানভীর হোসেন, রাজিব আহমেদ, দীন ইসলাম, অনিক রায়, সাইদুর রহমান কুটি, আবুল কালাম সুমন, মো. আলী, আবদুল করিম, আবদুল বারিক, হাফেজ ইমরান আহমেদ, মো. শাহিন ও আবদুল হক প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন- মেয়র জিকে গউছ কিবরিয়া হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ওই সময় তিনি পবিত্র হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তারপরও ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অবিলম্বে এই মামলা থেকে মেয়র জিকে গউছকে অব্যাহতি দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।
প্রকাশ্য থেকেও চার্জশিটে ‘পলাতক’ মেয়র আরিফ
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন, সিটি করপোরেশনে অফিস করলেন- এর পরও সম্পূরক চার্জশিটে ‘পলাতক’ সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের আদালতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তাকে পলাতক আসামি হিসেবে সিআইডি উল্লেখ করেছে। আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তিনি কখনোই পলাতক ছিলেন না। নিজের অফিসে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানান। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চীন সফর শেষে দেশে ফেরার পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিয়মিত সিলেট সিটি করপোরেশনে তার কার্যালয়ে অফিস করছেন। প্রতিদিনই তিনি দাপ্তরিক কাজকর্ম করছেন। পাশাপাশি প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি সামাজিক ও সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আর চার্জশিট দেয়ার আগের দিন বুধবার আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় অবস্থান করেন। ওই দিন তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। গতকাল আরিফুল হক চৌধুরী মোবাইল ফোনে মানবজমিনকে জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান। সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে প্রস্তাবনা ও টাকা ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে সেখানে যান এবং বেলা দেড়টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে ছিলেন। এ ছাড়া ফিরে এসে বৃহস্পতিবার দিনভর সিলেট নগর ভবনে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে, আদালতে দেয়া চার্জশিটে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। আদালতে দেয়া চার্জশিটে আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, মেয়র সিলেট সিটি করপোরেশন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন হবিগঞ্জ সদর আদালতের জিআরও। তবে, পরে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা পারুল। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরীকেই মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানান। তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের আরও জানান, মামলার তদন্তে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.