চার মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে

চার মাসে দেশের শেয়ারবাজারে ১ লাখ ৭১ হাজার বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার) অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। ফলে আবারও বিও অ্যাকাউন্ট ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে ৩০ শতাংশ অ্যাকাউন্টে শেয়ার নেই। এরা শুধু প্রাথমিক শেয়ারে (আইপিও) আবেদন করে। ইলেট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিও অ্যাকাউন্ট বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ এতে বাজারে নতুন পুঁজি আসে। ফলে তারল্য প্রবাহ বাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা অনভিজ্ঞ। ফলে নতুন বিনিয়োগকারী এলে লুটেরাদের সুযোগ তৈরি হয়।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে হলে ব্রোকারেজ হাউস কিংবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। শেয়ারবাজারের পরিভাষায় একে বিও অ্যাকাউন্ট বলে। সিডিবিএল সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৬ জুলাই বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার। সোমবার পর্যন্ত তা বেড়ে ৩০ লাখ ১৭ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে ৪ মাসে বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার। সিডিবিলের তথ্যানুসারে বর্তমানে পুরুষের বিও অ্যাকাউন্ট ২২ লাখ এবং নারীদের প্রায় ৮ লাখ। অন্যদিকে আবাসিক হিসেবে বাংলাদেশে বসবাসকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট ২৮ লাখ ৫২ হাজার, প্রবাসীদের ১ লাখ ৪২ হাজার এবং কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ১০ হাজার। তবে বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার নেই। এসব অ্যাকাউন্টধারী শুধু আইপিওতে (শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আবেদন করার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছে।সূত্র জানায়, আইপিও আবেদনের জন্য নামে-বেনামে প্রচুর বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। একই ব্যক্তি এক থেকে দেড়শ পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ত্বরিতগতিতে বিও অ্যাকাউন্ট বাড়তে থাকে। আর ২০০৯-১০ সালে ব্যাপক আকার বাড়ে। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। কিন্তু ২০১০ সাল শেষে তা ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর এই প্রবণতা রোধে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়াও বিও অ্যাকাউন্টে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে যারা একবার অ্যাকাউন্ট খুলেছে, ওই অ্যাকাউন্টে নতুন করে ন্যাশনাল আইডি কার্ড নেয়া হয়নি। এদিকে ২০১০ সালে বাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর বিও অ্যাকাউন্ট কমতে থাকে। ২০১২ সালে তা ৩০ লাখের নিচে নেমে আসে।সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে ৫০০ টাকা লাগে। এরমধ্যে সিডিবিএল ১৫০, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ৫০ এবং বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ২০০ টাকা জমা হয়। প্রতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে এই টাকা সিডিবিএলে জমা দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নবায়ন ফি না দেয়ায় গত বছর ১ লাখ ৪১ হাজার অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হয়েছিল। আর সর্বশেষ হিসাবে ১৬ জুলাই দেশের শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার। নতুন বেশ কিছু কোম্পানিকে কেন্দ্র করে বিও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত সোমবার তা ৩০ লাখ ১৭ হাজারে উন্নীত হয়।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিও বৃদ্ধি বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ নতুন অ্যাকাউন্ট খুললে বাজারে নতুন পুঁজি আসে। এতে তারল্য প্রবাহ বাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগকারী অনভিজ্ঞ। বিনিয়োগকারীরা হুজগে মাতে। কোম্পানির মৌল ভিত্তি বিবেচনা ছাড়াই গুজবে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনে। আর শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ বিও অ্যাকাউন্ট বাড়লে লুটেরা শ্রেণী লাভবান হয়। তবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে কোনো ধরনের কারসাজি হলে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নতুন বেশ কিছু কোম্পানি বাজারে এসেছে। এসব কোম্পানির আইপিওকে কেন্দ্র করে বিও অ্যাকাউন্ট বাড়তে পারে। তিনি বলেন, বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি বাজারের জন্য ইতিবাচক। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীদের পরিপক্বতার অভাব রয়েছে। ফলে তারা দুর্বল মৌল ভিত্তির শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

No comments

Powered by Blogger.