বয়স বাড়াতে ছয় পাইলটের ৭০ লাখ টাকা ঘুষ

পরস্পরকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দেশে সোনা চোরাচালানের সবচেয়ে বড় মামলায় গ্রেফতার হওয়া বিমানের তিন কর্মকর্তাসহ ৫ জন। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর হাকিমের পৃথক ৫টি আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, স্বীকারোক্তিতে পরোক্ষভাবে সোনা চোরাচালানে তারা নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে তারা এ কাজ করেছেন। বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার নামও তারা জবানবন্দিতে প্রকাশ করেছেন।
এর আগে সোনা চোরাচালানে দেশের সবচে বড় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মিনহাজুল ইসলাম রোববার বিকালে রিমান্ড শেষে বিমানের তিন কর্মকর্তাসহ ৫ জনকে মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করেন। এর মধ্যে সোনা চোরাচালানের মূলহোতা মাহমুদুল হক পলাশকে হাজির করা হয় মহানগর হাকিম মারুফ হোসেনের আদালতে। বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনকে হাজির করা হয় আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে। শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেনকে মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদকে এসএম আশিকুর রহমানের এবং মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদকে মহানগর হাকিম আনোয়ার সাদাতের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা মহানগর হাকিমের ৫ আদালতের খাস কামরায় গ্রেফতারকৃতরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। এরপর রাত ৭টার দিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের অব্যাহত জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়েন সোনা চোরাচালানের মূলহোতা মাহমুদুল হক পলাশ। সোনা চোরাচালানের নানা তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস করার পর আদালতেও জবানবন্দি দিতে রাজি হন তিনি। বিমানের প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ ও শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেনও জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তবে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছিল না বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনকে।
এদিকে সোনা চোরাচালানের গডফাদার পলাশ ও তার স্ত্রী নুরজাহান সিন্ডিকেটের সদস্য বিমানের ৫ পাইলট ২ ফাস্ট অফিসার ও সিকিউরিটি বিভাগের একজন জেনারেল ম্যানেজারের নাম পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এরা হলেন- ক্যাপ্টেন ফজল, ক্যাপ্টেন মুনির, ক্যাপ্টেন ছিদ্দিক, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ, ক্যাপ্টেন আমিনুল, ক্যাপ্টেন জামিল, ফাস্ট অফিসার মুসাউর, ফাস্ট অফিসার শামীম, সিকিউরিটি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মমিনুল ও জেনারেল ম্যানেজার আতিক সোবহান। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেট পাইলটদের বয়স বাড়ানোর জন্য বিমানের একজন বোর্ড মেম্বারকে ৭০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিল। আর এই ঘুষের পুরো লেনদেনটি তদারকি করেছেন পলাশ। জানা গেছে, এই ৭০ লাখ টাকার মধ্যে বিমানের ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ওই বোর্ড মেম্বার কৌশলে বিমানকে এই টাকা আদায় করে দেন। বাকি টাকা বিমানের পরিচালনা পর্যদের ওই বোর্ড মেম্বারকে দেয়ার কথা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, পলাশ ও তার স্ত্রী কেবিন ক্রু নুরজাহানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পলাশ দেশের বাইরে গেলে এসব পাইলট তাকে বিমানের ককপিটে বসিয়ে ফ্লাইট চালাতেন। বয়স বাড়ানোর আগে প্রায় এক মাস ধরে বাপা অফিসে পলাশকে এদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উত্তরা এলাকায় সালাউদ্দিন নামে বিমানের এক ঠিকাদারের অফিসে পলাশকে এসব পাইলটকে নিয়ে আড্ডা দেয়ার অভিযোগ আছে।

No comments

Powered by Blogger.