নরসিংদীতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা

নরসিংদীতে যৌতুকের জন্য বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় স্বামীর দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে এক নববধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রায়পুরা উপজেলার বাহেরচর গ্রামে স্ত্রী সুবর্ণা আক্তারের গায়ে আগুন দেয় স্বামী ইলিয়াছ হোসেন। আহত অবস্থায় সুবর্ণাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত সুবর্ণা বাহেরচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন কাজলের মেয়ে। সে নরসিংদী সরকারি কলেজের ২০১৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার স্বামী ইলিয়াছ শহরের নাগরিয়াকান্দী এলাকার খোকা মানিকের ছেলে। কৃষক কাজলের ৭ ছেলেমেয়ের মধ্যে সুবর্ণা ছিল সবার বড়। কলেজে যাতায়াতের পথে সুবর্ণার সঙ্গে বখাটে ইলিয়াছের পরিচয় হয়। প্রথমদিকে সুবর্ণা ইলিয়াছের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও এক পর্যায়ে সম্মত হয়। সম্পর্কের দুই মাস যেতে না যেতেই ইলিয়াছ সুবর্ণাকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। অন্যথায় সে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে মানসিক চাপ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুই পরিবারের সম্মতিতে ৮ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কথা ছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সুবর্ণাকে শ্বশুরবাড়িতে তুলে দেয়া হবে। ওই সময় যৌতুকের ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। তবে বিয়ের পরই ইলিয়াছের পরিবারের সদস্যদের আচরণ দ্রুত বদলে যায়। শনিবার বিকালে নিজের বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে সুবর্ণার বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ইলিয়াছ তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আগুনে সুবর্ণার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
হাসপাতালে আহত অবস্থায় সুবর্ণা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঘরে ঢোকামাত্রই ইলিয়াছ যৌতুকের টাকার কথা জানতে চায়। কিন্তু বাবার কাছে টাকা চাইতে অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াছ সঙ্গে থাকা কেরোসিন সুবর্ণার গায়ে ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম জানান, ইলিয়াছ যৌতুক বাবদ ২ লাখ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ ও আসবাবপত্র দাবি করে। সকালে (শনিবার) সুবর্ণা আমাকে বিষয়টি জানিয়ে কান্নাকাটি করে কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে যায়। সন্ধ্যায় ইলিয়াছ তাকে পুড়িয়ে হত্যা করে।
নিহতের বোন স্বর্ণা ইসলাম বলেন, বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই সে একা কান্নাকাটি করত। কিন্তু মুখ খুলে আমাদের কিছু বলত না। আপু নিজের মধ্যে কষ্ট পুষে রাখত। সুবর্ণাকে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, সুবর্ণা কলেজের মেধাবী ছাত্রী ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নির্বাচনী পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। যৌতুকের জন্য তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এখনও পরিবার থেকে কোনো মামলা হয়নি। ঘাতককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যৌতুকের জন্য সুবর্ণাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে জেলা মহিলা পরিষদ। সংগঠনটির সভাপতি আশালতা সাহা বলেন, এ ঘটনা দুঃখজনক। আর যেন কোনো নারী সুবর্ণার মতো ভাগ্যবরণ না করেন সে জন্য পাষণ্ড স্বামীর কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.