অভিযুক্ত ২১ র‌্যাব সদস্য

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাবের ২১ সদস্য জড়িত। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এই ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ ৬ মাস তদন্ত শেষে রোববার বিকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয় র‌্যাব। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় র‌্যাবের একটি প্রতিনিধি দল তদন্ত প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিয়েছে। র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তে র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এই তিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও র‌্যাব-১১-এর বিভিন্ন পদমর্যাদার আরও ১৮ জন সদস্য জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আদালতের আদেশে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আফতাব আহমেদ। সদস্যরা হলেন লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সরওয়ার, মেজর সাদেকুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার সাজ্জাদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাব সদর দফতরকে না জানিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ওই যুগঅভিযান চালান এবং সাতজনকে হত্যা করে লাশ পানিতে ডুবিয়ে দেন। শীতলক্ষ্যায় লাশ ডুবিয়ে ফেরার পথে র‌্যাবের দলটির সঙ্গে ঘাটে গিয়ে দেখা করেন র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। তিনি সবাইকে অভয় দিয়ে বলেন, তার নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে। তাই পরবর্তী সময়ে যা কিছুই ঘটুক না কেন সবকিছু তিনিই মোকাবেলা করবেন। তদন্ত চলাকালে র‌্যাব-১১-তে কর্মরত একাধিক র‌্যাব সদস্যের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ঘটনার পরপরই বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে অভিযুক্ত তিন ঊর্ধ্বতন র‌্যাব কর্মকর্তাকে তাদের নিজস্ব বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির অন্যতম সদস্য ও র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সরওয়ার রোববার যুগান্তরকে বলেন, তাদের দায়িত্ব ছিল বিভাগীয় তদন্ত করা। বিভাগীয় তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য এবং সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে যা প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে তদন্তকাজ সম্পন্ন করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে র‌্যাবের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে তাদের বেশির ভাগই এখন জেলহাজতে আছেন। এদের অনেকেই ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। অভিযুক্ত এসব র‌্যাব সদস্যের অনেককে র‌্যাবই গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে অভিযুক্ত কয়েকজন র‌্যাব সদস্য এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ তার প্রাইভেট কার চালক জাহাঙ্গীর, বন্ধু তাজুল, স্বপন ও লিটন এবং প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার প্রাইভেট কার চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র‌্যাব। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। ঘটনার তদন্ত চলাকালে ৫ মে হাইকোট স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে র‌্যাবকে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.