সাপ নয় আলমারিতে ছিল লাশ

মা নূরজাহান বেগম এগিয়ে গেলে সুমন তাকে থামিয়ে বলেন, আলমারিতে হাত দিও না, ওখানে সাপ। নূরজাহান বেগম তখন আর হাত দেননি। পরে স্ত্রী নির্যাতনের মামলায় সুমনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে ছাড়াতে মা থানায় যাওয়া-মাত্র সুমন জিজ্ঞেস করেন, আলমারিতে হাত দিয়েছ নাকি? ওখানে হাত দিও না। তাহলে সবার তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। সুমনের কথায় সন্দেহ হয় নূরজাহান বেগমের। পরে বাসায় ফিরে আলমারি খুলে দেখতে পান আলাউদ্দিনের লাশ।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ এলাকার ডুরিআঙ্গুল লেনে। রোববার সকাল ১০টার দিকে গলায় তার প্যাঁচানো লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আলাউদ্দিন শিকদার সম্পর্কে সুমনের খালাতো ভাই।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মুত্তাকিন জানান, নিহত আলাউদ্দিন শিকদারের বাসা পাশের ছোটবাট মসজিদ এলাকায়। যে বাসায় লাশটি পাওয়া গেছে সেটি নিহতের খালার বাড়ি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তার খালাতো ভাই জুবায়ের হোসেন সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুমনের মা নূরজাহান বেগম এবং ভাই মো. রাজনকেও আটক করেছে পুলিশ। লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজগর আলী বলেন, নিহতের গলায় তার প্যাঁচানো ছিল। লাশ লেপের কাভার দিয়ে স্টিলের আলমারিতে গুছিয়ে রাখা ছিল। অন্তত একদিন আগে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আলাউদ্দিন নিউমার্কেটে শাপলা ট্রেডার্স নামে একটি মাছের আড়তে কাজ করতেন। ওই আড়তের মালিক সম্পর্কে আলাউদ্দিনের ভগ্নিপতি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আলাউদ্দিন ছিলেন দ্বিতীয়। নিহতের বাবা হোসেন শিকদার বলেন, শনিবার সুমন ফোনে টাকা ধার চাইলে আলাউদ্দিন তার বাসায় গিয়ে কথা বলবে বলে জানায়। দুপুরের পর সে সুমনের বাসায় যায়। এরপর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
লালবাগ পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মফিজুদ্দিন আহমেদ বলেন, সুমন মাদকাসক্ত। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। তার স্ত্রীর বাবার বাড়ি পাশের মহল্লায়। ছয় মাস ধরে তার স্ত্রী সেখানেই থাকছেন। সুমনের সন্দেহ ছিল, তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাউদ্দিনের সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে খুন করে থাকতে পারেন।
পুলিশ জানায়, শনিবার সুমন তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও স্ত্রীকে মারধর করে। এতে ওই বাসার লোকরা পুলিশ খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে সুমনকে আটক করে থানায় আনে।
নিহত আলাউদ্দিনের ভাই লিটন শিকদার দাবি করেন, সুমন নিজের স্ত্রীকে মিথ্যা সন্দেহ করে আলাউদ্দিনকে জড়িয়ে খারাপ কথা বলে হত্যা করেছে। তিনি জানান, শনিবার সকাল থেকেই আলাউদ্দিনকে খুঁজে না পাওয়ায় তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার বিকালে ডুরিআঙ্গুল লেনে এক বৃদ্ধ মারা গেলে তার বন্ধুরাও সেখানে যান। তখন তিনি আলাউদ্দিনের বিষয়ে জানতে চান।
লিটন জানান, তিনি গ্রেফতার সুমনকে দেখতে যান লালবাগ থানায়। তখন তার ভাই রাজন ও মা নূরজাহানও ছিলেন। থানার ভেতরে সুমন তার মাকে বলে, আলমিরায় হাত দিয়েছ নাকি? তখন তার মা বলে, না এখনও দেইনি। সুমন হাত দিতে নিষেধ করে। পরে তার খালা বাসায় ফিরে আলমারিতে লাশ পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

No comments

Powered by Blogger.