‘সুমন ছাত্রলীগের কেউ না’ by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সঙ্গে ফেসবুকে ফ্রেমবন্দি সুমন
‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে জড়িতরা ছাত্রলীগের কেউ না। নিহত সুমন দাসও ছাত্রলীগের কেউ নয়। বহিরাগত সুমনের মৃত্যুর দায় ছাত্রলীগ কেন নেবে?’ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত সুমন দাসকে কেউই কাছে টানতে চাইছে না। কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ কোন দায় নেবে না। একই সুরে সুর মেলায় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগও। তারাও চেনে না সুমনকে। ছাত্রলীগের হয়ে মিছিলে-মিটিংয়ে সরব উপস্থিত থাকা সুমনকে এখন আর কেউ চিনতে চাইছেন না। ক’দিন আগেই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুজ জহির সুফিয়ান যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরেন। তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন সুমন দাসও, রাতে বাসায় গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। সব স্মৃতিই ভুলে যেতে চাইছেন ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের দিন সিলেট নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সুমন দাস সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের অনুসারী। বিষয়টি সত্যি কি না জানতে চাইলে কোন ভাবনা-চিন্তা না করেই নাসির খানের জবাব ছিল, তিনি চেনেন না সুমনকে। কেউই সুমনকে ছাত্রলীগের কর্মী স্বীকার করতে না চাইলেও সুমনের হৃদয়জুড়ে ছিল আওয়ামী চেতনার স্পন্দন। তার ফেসবুকের অ্যালবামজুড়ে জয়বাংলা শ্লোগান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, বঙ্গবন্ধুতনয় শেখ রাসেলের ছবি; নৌকার ছবি, ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের ছবি- তবুও সুমন ছাত্রলীগের কেউ না। প্রোফাইল পিকচারের তালিকায় নিজের মুখের পাশাপাশি জায়গা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রাণোচ্ছল মুখাবয়বও। তারপর সুমন ছাত্রলীগের কেউ নয়!
সুমন যদি ছাত্রলীগের কেউ না হবে তবে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছবি কেন? কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজই বা কেন ফ্রেমবন্দি হলেন তার সঙ্গে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগের মিছিলে সামনের কাতারে থাকা সুমনের একটি ছবির নিচে তার বন্ধু আউয়াল আহমদ সোহানের মন্তব্য, ‘হয়তো সুমন বা আমরা তেমন বড় নেতা নই, কিন্তু আমরা তো ছাত্রলীগ করি। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাই আমাদের গুরুত্ব নেই, কিন্তু আমাদের মনেপ্রাণে মহান নেতা মুজিবের আদর্শ, চিৎকার করে বলতে চাই সুমন ছিল ছাত্রলীগের কর্মী।’
আর কোন প্রয়োজন নেই তাই হয়তো ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ভুলে যেতে চাইছে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সিলেট মহানগর কার্যকরী কমিটির সদস্য সুমনকে। তবে ভালবাসার সম্পর্ক কখনওই রঙ বদলায় না। তাই কিছুতেই সুমনের স্মৃতি ভুলতে পারছে না তার পরিবার। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামের পূজাবাড়ির হরিধন দাসের ছেলে সুমনকে কি আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন তার বাবা-মা’র কোলে। স্থানীয় ব্রজেন্দ্রগঞ্জ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর ২০০৯ সালে সুমন ভর্তি হয়েছিলেন দিরাই কলেজে। ২০১১ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য সিলেট এসেছিলেন সুমন। পরিবারের সদস্যরা এখন ভাবছেন, সেটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় ভুল বা পাপ ছিল সুমনের জীবনে। সিলেট না এলে আর কিছু না হোক-বাবা-মার কোলে তো থাকতে পারতো সুমন।

No comments

Powered by Blogger.