দুরন্ত দুর্বার লাল-সবুজ

সিরিজ জয়ের কাজটা চট্টগ্রামেই এগিয়ে রাখল টাইগাররা। এবার ঢাকায় সেটা পূর্ণতা দেয়ার পালা। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে। রোববার চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৬৮ রানের বড়সড় ব্যবধানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০-তে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল (৭৬) ও এনামুল হকের (৮০) ১৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও মাত্র ৪৬ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলার ধাক্কায় ২৫১ রানে থামতে হয়েছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু বোলারদের দাপটে মাঝারি সেই পুঁজি নিয়েই হেসেখেলে জিতেছে বাংলাদেশ। ২৫২ তাড়া করতে নেমে মাশরাফি মুর্তজার তোপের মুখে শুরুতেই পথ হারানো জিম্বাবুয়েকে আর ঘুরে দাঁড়াতে দেননি আরাফাত সানি। ৪৪.৫ ওভারে ১৮৩ রানে শেষ জিম্বাবুয়ে। সর্বোচ্চ ৫০ রান করা সলোমন মিরের উইকেটটি নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে কাঁপিয়ে দেন মাশরাফি। জিম্বাবুয়ের প্রথম চার উইকেটের তিনটিই নেন টাইগার অধিনায়ক। এরপর মঞ্চে আসেন স্পিনার আরাফাত সানি। মাত্র ২৯ রানে চার উইকেট নিয়ে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার। তবে ৩৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন মাশরাফি। এই ম্যাচ দিয়েই শেষ হল সিরিজের চট্টগ্রাম পর্ব। বাকি তিনটি ওয়ানডে হবে ঢাকায়। আগামী বুধবার মিরপুরে তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতলেই স্বাগতিকদের সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। আগের ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। কাল টস জিতেও ব্যাটিং বেছে নিলেন মাশরাফি। কাকতালীয়ভাবে দুই ম্যাচেই সাত উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা। মিল বলতে এটুকুই। একাদশে কোনো পরিবর্তন না এলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে দেখা গেল ব্যাপক রদবদল। সাকিব আল হাসান খেললেন তিন নম্বরে আর মুমিনুল হক নামলেন সাত নম্বরে। তাতে হিতে বিপরীতই হল। প্রথম ওয়ানডেতে ৭০ রানের মধ্যে চার উইকেটের পতন ঘটেছিল। শুরুর সেই বিপর্যয় সামলে সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড জুটিতে শেষ পর্যন্ত ২৮১ রানের বড়সড় পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কাল হল উল্টোটা। দারুণ শুরুর পর হঠাৎ পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত সাত উইকেটে ২৫১ রান তুলল টাইগাররা। ১৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে দলকে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও এনামুল হক। শক্ত সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্কোর যেখানে তিনশ’ পেরোনোর কথা ছিল, সেখানে আড়াইশ’র ঘরে থেমে যাওয়াটা অবশ্যই হতাশার। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ফিফটিতে তুষ্ট থাকতে হয়েছে তামিম ও এনামুলকে। তবে রান যা করার দুই ওপেনারই করেছেন। শুরুতে ধীরলয়ে রান তুললেও জমে গিয়েছিল তাদের জুটি। ৩২.৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ১৫৮। ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১৯৯৯ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সর্বোচ্চ ১৭০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন শাহরিয়ার হোসেন ও মেহরাব হোসেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কাল সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা যখন উঁকি দিচ্ছে, ঠিক তখনই অপ্রত্যাশিত রানআউটের শিকার তামিম ইকবাল। আলসে দৌড়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে চিগুম্বুরার সরাসরি থ্রোতে আউট হয়ে যান তামিম। ৯৮ বলে ৭৬ করে তামিম ফিরে আসার পরই পথ হারায় বাংলাদেশ। বিনা উইকেটে ১৫৮ থেকে মুহূর্তেই স্কোর ১৭৩/৪। মাত্র ১৭ বল ও ১৫ রানের মধ্যেই হয়েছে এই আসা-যাওয়ার খেলা।
বাংলাদেশের ভিতটা নড়ে যায় মূলত তিন জোড়া ভূমিকম্পে! ১৫৮, ১৭৩ ও ২০৪ রানের মাথায় পরপর দুটি করে উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তামিমের বিদায়ের পর আগের ম্যাচের হিরো সকিব ফিরে আসেন গোল্ডেন ডাক মেরে। এরপর মাত্র তিন বলের ব্যবধানে এনামুল ও সাব্বিরকে বিদায় করে স্বাগতিকদের বড় একটা ধাক্কা দেন পানইয়ানগারা। সিবান্দার এক দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১১০ বলে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেন এনামুল। আগের ম্যাচে ২৫ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলা সাব্বির এবার শূন্য রানেই আউট। পঞ্চম উইকেটে ৩১ রানের জুটি গড়ে ৪৪তম ওভারে পর পর দুই বলে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ (১২) ও মুশফিকুর (২৭)। শেষদিকে মুমিনুলের ২৩ বলে করা অপরাজিত ৩৩ রানের সুবাদেই আড়াইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। জিম্বাবুয়ের কামুনগোজি ও পানইয়ানগারা দুটি করে উইকেট নেন।

No comments

Powered by Blogger.