স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে বিমানের ডিজিএমসহ ৫ জন রিমান্ডে

স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে বিমানের ডিজিএম, ক্যাপ্টেন, ম্যানেজারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে  চোরাচালানের সিন্ডিকেট। এদের মাধ্যমে একের পর এক চোরাচালান এসেছে দেশে। স্বর্ণ কেনা থেকে শুরু করে গোপনীয়ভাবে বিমান ও বিমানবন্দর হয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ করতেন তারা। বুধবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল দুপুরে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, স্বর্ণ চোরাচালানে শুধু এই পাঁচ সদস্য না বরং বিমানবন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক সিন্ডিকেট এতে জড়িত রয়েছে। আছেন বিমানের ডিজিএম, চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং, শিডিউলিং ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তিনি জানান, স্বর্ণ চোরাচালানের এ সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করতো ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শফিউল আলম ওরফে মিন্টু নামে এক ব্যক্তি দুবাই থেকে এ স্বর্ণ কিনে দেয়। মিন্টুই এই আটক স্বর্ণের মালিক বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, এখানে যারাই জড়িত থাকবে, তাদের সবাইকেই আটক করা হবে। তিনি কোন পদে বা চেয়ারে অবস্থান করছেন, তা বিবেচ্য না। জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে ডিবি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ১২ই নভেম্বর বিজি-০৪৬ ফ্লাইটে বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আফসার ওরফে রাসেলকে দুই কেজি ছয় শ’ গ্রাম স্বর্ণ ও ছয়টি আইপ্যাডসহ আটক করে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
রাসেলকে আটকের পর এ ঘটনায় ওই দিন বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়। পরে মামলাটির তদন্তভার ডিবিকে দেয়া হয়। ডিবি দায়িত্ব পাওয়ার পর আাদালতের মাধ্যমে রাসেলকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের তথ্য দেয় রাসেল। স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেটগুলো চোরাচালান আনার ক্ষেত্রে তিন-চারটি সাধারণ কৌশল অবলম্বন করে থাকে। রাসেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ পাঁচজনকে আটক করে ডিবি। আটককৃতরা হচ্ছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মো. আসলাম শহীদ, বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসের ডিজিএম এমদাদ হোসেন, ম্যানেজার (শিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন, ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ এবং উত্তরার ‘ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ’-এর মালিক হারুন-অর-রশীদ।
গ্রেপ্তারের পর তাদের ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। এ সময় তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ রিমান্ড শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিকে, স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও ১০ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন বিমানের জুনিয়র সিকিউরিটি অফিসার মো. কামরুল হাসান, সুইপিং সুপারভাইজার মো. আবু জাফর, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার সালেহ আহমেদ, মজিবর রহমান, জুনিয়র ইন্সপেকশন অফিসার মো. শাহজাহান সিরাজ, এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. মাসুদ, অ্যাসিসট্যান্ট এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. আনিস উদ্দিন ভুঁইয়া, প্রকৌশল হ্যাংগারের মেকানিক ওসমান গণি, রায়হান আলী ও মাকসুদ আলী। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১২৪ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এ ঘটনা তদন্তে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। এদিকে এ ঘটনায় বিমান কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ এবং মজিবর রহমানকে গত ১লা সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে রায়হান আলী নিজেই চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

No comments

Powered by Blogger.