সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি বর্তমান সরকারকে উৎখাতে অনবরত হুমকি দিচ্ছে, সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও জনগণের কাছ থেকে ন্যূনতম কোন সাড়া পাচ্ছে না। এতেই প্রমাণ হয়, বর্তমান সরকারের ওপর দেশের মানুষের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কারণ,  দেশের জনগণ জানে যে, বর্তমান সরকারই পারবে দেশকে উন্নত করতে। তাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, কেউ এই অগ্রযাত্রা পিছিয়ে দিতে পারবে না। সম্প্রতি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-এ বাংলাদেশের দুই প্রার্থীর বিজয়কে ‘বিরল অর্জন’ এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংসদের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থার বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে একটি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, কার্যকর ও উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের জয়লাভ একদিকে যেমন বিরল অর্জন, তেমনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ক্রমবর্ধমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রমাণ। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা এবং অকুণ্ঠ সমর্থন এ বিজয়ের অন্যতম একটি কারণ বলে আমি মনে করি। গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সিপিএ ও আইপিইউ-এ বাংলাদেশের দুই প্রার্থীর বিজয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি আগে একজন যুদ্ধাপরাধীকে (সাকা চৌধুরী) ওআইসিতে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ওই যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দেয়নি। প্রথম রাউন্ডে বিএনপির প্রার্থী দুই ভোট এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে ওই যুদ্ধাপরাধী শুধু নিজের একটি ভোট পেয়েছে। আমরা ওই দুই বিশ্ব সংস্থায় দু’জন বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছিলাম বলেই এ বিজয় সম্ভব হয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, সিপিএ ও আইপিইউ-এ বিজয়ের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হয়েছে যে, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অব্যাহত অগ্রযাত্রার বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় পুরোপুরি আস্থা রাখে। গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যে আজ বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, সেটি আবারও এ বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, দশম জাতীয় নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নিয়ে কোন কোন মহলের নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্বাচিত হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তি ক্রমশই আরও জোরদার হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বস্তি
এ কে এম রহমতুল্লার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ভিত সুদৃঢ় হয়েছে। মানবতাবিরোধীরা তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী গোষ্ঠীসমূহের ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন লবিস্ট গ্রুপের পেছনে ব্যয় করা  সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এবং  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি অঙ্গীকার করেছিলাম দেশের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার করা হবে। চিহ্নিত মানবতাবিরোধীদের বিচারের মাধ্যমে উচিত  সাজা  নিশ্চিত করলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে ও  তাদের পরিবারের সদস্যরা তৃপ্ত হবেন। ১৯৯১ সালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমি দাবি তুলেছিলাম এবং শহীদদের মা’দের নিয়ে দাবি বাস্তবায়নে সংগ্রাম করেছিলাম। আজ সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সাজা কার্যকর শুরু হয়েছে, এজন্য আমি স্বস্তি বোধ করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের বিচার পাওয়ার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক এক করে সব জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি প্রদত্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করার জন্য অবিচল থেকে কাজ করে যাবো। শেখ হাসিনা বলেন, মানবতাবিরোধীদের বিচারের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রসিকিউটরগণ এবং এর অধীনে গঠিত তদন্ত সংস্থা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সংগৃহীত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে একমাত্র তাদেরই বিচার হচ্ছে। তাছাড়া ট্রাইব্যুনাল বিচার কক্ষে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়ায় বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। এজন্য ২০১৪ সালের ১৬ই  জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে (আইসিটি) কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশের চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, একমাত্র বাংলাদেশেই যুদ্ধাপরাধ আইনে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বাইরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও বাদী পক্ষের আপিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাংলাদেশের  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিশ্ব সমপ্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
মোবাইল ফোনের কলরেট কমানোর পরিকল্পনা নেই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের কলরেট বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচিত। তাই মোবাইল ফোনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কলরেট পুনর্নির্ধারণের আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান মোবাইল ফোনের কলরেট প্রতি মিনিট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা হতে সর্বোচ্চ ২ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল মোবাইল অপারেটরের গড় কলরেট প্রতি মিনিট ৮৩ পয়সা। এটা বিশ্বের সর্ব নিম্ন কলরেট হিসেবে বিবেচিত। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক প্রতিযোগিতার কারণে কলরেট ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া ১০ সেকেন্ড পালস বাধ্যতামূলক করায় প্রতি ১০ সেকেন্ড অন্তর বিল চার্জ করা হয়। এতে গ্রাহককে শুধু ব্যবহৃত সময়ের প্রতি ১০ সেকেন্ডের গুণিতক হিসেবে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্রাহককে শেষ মিনিটের বাকি সময়ের জন্য বিল দিতে হয় না।

No comments

Powered by Blogger.