ভারতের বিতর্কিত ‘গুরু বাবা রামপাল’ জেলে



ভারতে বিতর্কিত ধর্মগুরু বাবা রামপালকে গত রাতে তার আশ্রম থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার করার পর আজ আদালত তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। তার আশ্রমে ঘটে যাওয়া ছয়টি মৃত্যুর জন্য রামপাল আজ দুঃখ প্রকাশ করলেও ভক্তদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। হরিয়ানার হিসারে তার আশ্রমে এখনো প্রায় দুই থেকে তিন হাজার ভক্ত ভেতরে রয়ে গেছেন, পুলিশ যাদের ধীরে ধীরে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। হরিয়ানাতে হিসার শহরের কাছে বারওয়ালাতে ১২ একরেরও বেশি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাবা রামপালের সতলোক আশ্রম। গত বাহাত্তর ঘন্টা ধরে মিডিয়ার নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে।
গত রাতে আশ্রমের ভেতর থেকে প্রায় কমান্ডো অভিযানের স্টাইলে পুলিশ ৬৩ বছর বয়সী রামপালকে গ্রেফতার করে এনেছে, আজ সকালে তাকে পেশও করা হয় চন্ডিগড়ের এক আদালতে। আট বছর আগেকার একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাবা রামপালকে যে জামিন দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করে আদালত তাকে জেলে রাখার রুল জারি করেন।
কিন্তু আশ্রমের চারপাশে এখনো ছড়িয়ে আছে তুমুল সংঘর্ষের নানা চিহ্ন। বিবিসি-র জুবেইর আহমেদ জানাচ্ছেন, সেখানে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে জুতো-চপ্পল, কাপড়চোপড়, বাসনকোসন, ব্যাগ ও আনো নানা জিনিস। মনে হচ্ছে একটা সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ ঘটে গেছে সেখানে। মূল দরজা এখনও বন্ধ। পুলিশ ভেতরে ঢুকছে না বা কাউকে ঢুকতেও দিচ্ছে না। তবে ঘন ঘন মাইকিং করে ভেতরে যে এখনো প্রায় হাজার দুই-তিন ভক্ত রয়ে গেছেন তাদের বেরিয়ে আসতে বলা হচ্ছে!
আজ সকালে বাবা রামপাল দাবি করেছেন, আশ্রমে যে মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে তার জন্য তিনি দুঃখিত। কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর জন্য তিনি হাজার হাজার ভক্তকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সেই কথাটা ঠিক নয়। ঘটনা হল, যে ভক্তরা এক এক করে আশ্রম থেকে বেরোচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই মুখ খুলতে চাইছেন না। আর যারা খুলছেন তারাও দাবি করছেন তাদের মোটেই জোর করে আটকে রাখা হয়নি।
যেমন নেপাল থেকে আসা এই ভক্ত হরি শাহ বলছিলেন, তিনি চার-পাঁচ দিন আগে গ্রামের আরো কয়েকজন সঙ্গীসাথীকে নিয়ে আশ্রম দেখতে এসেছিলেন নিজে থেকেই। নেপালে টিভির সাধনা চ্যানেলে বাবার অনুষ্ঠান দেখেই তারা রামপালের ভক্ত হয়েছেন, কেউ তাদের আসতে বা থাকতে জোর করেনি। আর ভেতরে এখনো তো হাজার দুয়েক লোক আছেন।
কিংবা ধরা যাক উত্তরপ্রদেশের ললিতপুর থেকে আসা এই ভক্তর কথাই, যিনি দিন দশ-বারো আগে এসেছিলেন আশ্রমের সৎসঙ্গে যোগ দিতে। তিনি বলছিলেন, শাস্ত্রের পাতা ধরে ধরে বাবা রামপাল দেখিয়ে দিয়েছেন কী ঘটবে, পুলিশ কী করবে সবই শাস্ত্রে লেখা আছে, আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলেও গেছে। ফলে বাবার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি তাদের আরো বেড়ে গেছে। তবে এই সরল, গরিব মানুষগুলোর পাশাপাশি আশ্রমের ভেতর বাবার সশস্ত্র বাহিনীও ছিল। যাদের বেশ কয়েক শ’ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। আর অন্যদের বাসে বা ট্রেনে চাপিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে নিজের নিজের মুলুকে।
হিসার রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে জুবেইর আহমেদ বলছিলেন, কাল রাত থেকেই এখানে শত শত ভক্তকে পুলিশ বিভিন্ন ট্রেনে তুলে দিচ্ছে। আবার অনেকে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে এই স্টেশনেই এসে নামছেন। দিল্লি থেকে আসা এই যুবক যেমন বলছিলেন তার শ্যালক দিন কয়েক আগে এই আশ্রমে এসেছিলেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ দিন হল তার কোনো খোঁজখবর নেই। এখন পুলিশের সাহায্য নিয়ে তিনি তাকে খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ধর্মগুরু নিজে এখন জেলে, আর সৎলোক আশ্রমের বাইরে এমনই নানা খন্ডচিত্র। ভক্তদের অসহায়তার ও অনিশ্চয়তার। আজ আদালতও মন্তব্য করেছে, ভারতে স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুদের এই ধরনের ডেরা বা আশ্রম চালানোতে রাশ টানা দরকার। কিন্তু হিসারের ঘটনাই প্রমাণ করে দিল এ কথা মুখে বলা যত সহজ, কাজে করা আদৌ তত সহজ নয়।
সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.