ডা. মাহজাবিন হত্যা- ‘টিপু সুলতান খুনি তার বিচার চাই’

সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানকে ‘নরপিশাচ’ উল্লেখ করে ডা. মাহজাবিনের পিতা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার মেয়েকে খান টিপু সুলতান, তার স্ত্রী ডা. জেসমিন আরা বেগম ও ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাব পরস্পর যোগসাজশে খুন করেছে। আমি এ খুনের বিচার চাই।’ গতকাল প্রেস ক্লাব যশোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘ডা. শামারুখ মাহজাবিনের উচ্চতা পাঁচ ফুট আড়াই ইঞ্চি। এ মেয়ে পাঁচ ফুট উঁচু গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে কিভাবে আত্মহত্যা করে?’ তিনি বলেন, ‘খান টিপু সুলতানের অনেক অপকর্মের সাক্ষী আমার মেয়ে। তার অনেক জাল জালিয়াতির ডকুমেন্ট তার হস্তগত হয়। এ কারণে নিজের মুখোশ উন্মোচন হওয়ার আগেই সে আমার মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।’ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মৃত্যুর পর মাহজাবিনের জিহ্বা মুখের ভেতরই ছিল। চোখ ছিল স্বাভাবিক। কণ্ঠনালির দুই পাশে আঙুলের দাগ, নখের আঁচড়, বাম হাতের কবজির নিচে ক্ষত, পিঠে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। এসব দেখে আমি নিশ্চিত, আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে।’ মৃত মেয়ের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুরুল ইসলাম। এ সময় সংবাদ সম্মেলন স্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। কেন ডা. শামারুখকে খুন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খান টিপু সুলতান মানুষ নয়, নরপিশাচ। সে আমার মেয়েকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করেছে। বিসিএস ও এফসিপিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি। তার ছেলে বেকার। সে কারণে পুত্রবধূ উচ্চশিক্ষিত হোক, তা সে চায়নি। বাবা-মায়ের দয়ায় বেঁচে থাকা বেকার ছেলের পক্ষে বিরুদ্ধাচারণ করা সম্ভব হয়নি।’ গত ১২ই নভেম্বর তার সঙ্গে ডা. শামারুখের টেলিফোন আলাপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘টিপু সুলতানের জালিয়াতি-দুর্নীতির কিছু ডকুমেন্ট আমার মেয়ের হাতে পড়েছিল। টেলিফোনে সে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমাদের এ টেলিফোনালাপ টিপু সুলতান শুনে ফেলে। সে কারণে আমার মেয়েকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।’ ‘বিয়ের সময় জামাইকে ব্যারিস্টার হিসেবে জানতাম’ উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ যশোরের সব মানুষ জানেন, টিপু সুলতানের ছেলে সাদাব ব্যারিস্টার। কিন্তু বিয়ের পর আমরা জানতে পারি সে একটি বেসরকারি কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছে। কিন্তু দু’বার বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সে কারণে সাদাব আদালতে প্র্যাকটিস করতে পারে না।’ টিপু সুলতানকে সীমাহীন লোভী উল্লেখ করে মাহজাবিনের পিতা বলেন, ‘বিয়ের পর নানা উছিলায় এই সাবেক সংসদ সদস্য আমার কাছ থেকে যৌতুক আদায় করেছেন। আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে টিপুর দাবি পূরণ করেছি। তারপরও আমার মেয়েকে বাঁচতে দেয়া হলো না।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি এ পর্যন্ত দেয়া যৌতুকের তালিকা, সেগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে ও দাম কত তা প্রকাশ করেন। প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘টিপু সুলতান অত্যন্ত প্রভাবশালী। সে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পক্ষে নেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে ভীষণ চাপ দিচ্ছে। এ অবস্থায় একমাত্র মিডিয়াই পারে সুবিচার নিশ্চিত করতে।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন সহায়তা কেন্দ্রের উপদেষ্টা জি বি আলম, বি এ এফ শাহীন কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, আইডিইবি’র সভাপতি প্রকৌশলী আবুল হোসেন প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৩ই নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসভবনে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ডা. শামারুখ মাহজাবিনকে। গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.