গ্রেপ্তার এড়াতে পারলেন না ধর্মগুরু

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে হিন্দুগুরু রামপাল মহারাজকে আটক করা হয়েছে। কিছুক্ষন আগে বিবিসি হিন্দী সার্ভিসের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন উত্তর ভারতের এই হিন্দু ধর্মগুরুকে গ্রেফতার করে দিল্লীতে নেয়া হয়েছে। এর আগে ভক্তদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষের পর হাজার হাজার অনুগামী ওই আশ্রম ছেড়ে পালিয়েছেন।
হরিয়ানা রাজ্যের হিসারে ওই আশ্রম থেকে আজ একটি শিশু-সহ চারজন মহিলার মৃতদেহও প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে, বাবা রামপাল নামে ওই ধর্মগুরু এখনও হাজার পাঁচেক ভক্তকে নিয়ে আশ্রমের ভেতরেই আছেন বলে তাদের ধারণা।
আট বছরের একটি পুরনো খুনের মামলায় অভিযুক্ত হলেও রামপাল ক্রমাগত কোর্টের সমন এড়িয়ে গেছেন।
রণক্ষেত্র হিসারের আশ্রম
দিল্লি থেকে প্রায় পৌনে দুশো কিলোমিটার দূরে হিসারের বারওয়ালাতে সতলোক আশ্রম – গত আটচল্লিশ ঘন্টায় যে ধর্মীয় আশ্রম পুরোদস্তুর রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে।
এই আশ্রমের প্রধান, সন্ত বাবা রামপালকে গ্রেফতার করতেই বিশাল বাহিনী নিয়ে পুলিশ এসেছে – দুদিন ধরে বাবার সমর্থকদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে, লাঠিচার্জ, শূন্যে গুলি বা কাদানে গ্যাস কিছুই বাকি নেই, কিন্তু এখনও রামপালের নাগালই পায়নি পুলিশ।
এরই মধ্যে আজ সকালে আশ্রমের পক্ষ থেকে চারজন মহিলা ও একটি দেড় বছরের শিশুর মৃতদেহ প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, বলছিলেন হরিয়ানার পুলিশ-প্রধান এস এন বশিষ্ঠ। তিনি আরও জানান, এদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়না তদন্তের পরই জানা যাবে।
ইতিমধ্যে পুলিশের অভিযান বহাল থাকবে – তবে অভিযানের এই পর্বে নিরীহ লোকদের আশ্রম থেকে বের করে আনার ওপরই পুলিশ জোর দেবে।
পুলিশকে ভীষন বেকায়দায় ফেলে দেওয়া এই ধর্মগুরু একটি অনুষ্ঠানের নাম করে দিনকয়েক আগেই তার প্রায় হাজার বিশেক ভক্তকে আশ্রমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।কিন্তু গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের আশ্রমেই আটকে রাখা হয়েছিল – যাতে ভক্তদের বেষ্টনী পেরিয়ে পুলিশ গুরুর নাগাল না-পায়।
কিন্তু এ সপ্তাহের গোড়ায় পুলিশ আশ্রম ঘিরে ফেলে, কেটে দেওয়া হয় জল ও বিদ্যুতের সরবরাহ – টান পড়ে রসদেও।
মঙ্গলবার থেকে আশ্রমের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী, যাদের নাম বাবা কমান্ডো – তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

রক্তাক্ত আশ্রম থেকে আজ ভোরে বাসে চেপে দলে দলে বেরোতে শুরু করেন অসহায় ভক্তরা :
মহিলা ভক্তদের অনেকেই তাদের সন্তানদের আশ্রমের ভেতরে রেখেই বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। তাদের কারও বয়স হয়তো দশ-বারো বছর, আবার কারও ফেলে আসা বাচ্চার বয়স আরও কম। কে এই বাবা রামপাল?
এই যে ধর্মগুরুর আদেশে হাজার হাজার ভক্ত সতলোক আশ্রমে জড়ো হয়েছিলেন, সেই বাবা রামপাল ছিলেন রাজ্য সরকারের সেচ বিভাগের একজন প্রকৌশলী – চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর তিনি এই আশ্রম খোলেন।
নিজেকে সন্ত কবীরের উত্তরসূরী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন – আর তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটের বিবরণ অনুযায়ী ২০০৬ সালে একটি মিথ্যা খুনের মামলায় জেলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
ওই মামলাতেই আপাতত জামিনে আছেন ধর্মগুরু, গত চার বছরে কোর্টে হাজিরা দেওয়ার আদেশ উপেক্ষা করেছেন অন্তত ৪৩বার।
এরপর আদালতের ধমকেই পুলিশ তাঁকে আটক করতে এসেছে, যদিও তার জেরে এখন হিংসা ছড়াচ্ছে ব্যাপকভাবে।
হিসারের এমপি ও রাজ্যে বিরোধী দল আইএনএলডি-র নেতা দুষ্যন্ত চৌতালা যেমন বলছিলেন, পুলিশ যেভাবে মহিলা-শিশুদের ওপরও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে ও অনেক লোক ঘায়েল হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তিনি এর উপযুক্ত তদন্তও দাবি করেছেন।
এই পটভূমিতেই রাজ্য পুলিশ এখনও ধর্মগুরুকে আটক করার অপেক্ষায় অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছে আশ্রমের বাইরে।
আশ্রমের ভেতর রয়েছে মানবঢাল এবং কৌশলে পাতা বুবিট্র্যাপ বা মারণফাঁদ – আর বাইরে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার প্রশ্ন, যার সুযোগ নিয়ে এখনও আদালতকে এড়িয়ে যেতে পারছেন সন্ত রামপাল!

No comments

Powered by Blogger.