‘ভাসানীই স্বাধীনতার আওয়াজ প্রথম তুলেছিলেন’ -খোকা

মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সহসভাপতি, ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, পাকিস্তানী শাসক  গোষ্ঠীর অবিচার, শোষণ, নিপীড়নে অতীষ্ঠ বাঙালী জাতির স্বাধীনতা আদায়ের জন্য মাওলানা ভাসানীই সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলা থেকে পাকিস্তানীদের বিদায় করার মধ্য দিয়েই বাংলার মানুষ সত্যিকার অর্থে মুক্তি লাভ করবে এবং নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষব হবে। পূর্ব বাংলার মানুষ দ্বিজাতি তত্ত্ব মেনে নিয়ে পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করেছিল বলেই আমাদের পক্ষে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাওলানা ভাসানীর অবদানের বর্ণনা দিয়ে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে এসে মাওলানা ভাসানীই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। কারণ তিনি পাকিন্তানের স্বাধীনতার পরই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা ও শাসকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে না পারলে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার কোন সুফল পাবে না। তিনি মাওলানা ভাসানীকে দূরদর্শী একজন রাজনীতিবিদ হিসবে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ যে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সে ভাষণ স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। কারণ ৭ই মার্চের পরও তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন, যা ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। স্বাধীনতার পর যখন ‘এক নেতা এক দেশ’ এর শ্লোগান উঠলো তখনই দেশের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছিল। যা এখন পর্যন্ত ঠিক করা সম্ভব হয়নি। সভায় বক্তাগণ বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা, স্বাধীনতার জন্য জাতিকে আহবান জানানো এবং স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মাওলানা ভাসানী যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সেই প্রস্তুতি শেখ মুজিবেরও ছিল না। সেজন্য শেখ মুজিব ভারতে না গিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে পাকিস্তানীদের হাতে ধরা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস মাওলানা ভাসানীকে আজো তার প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হয়নি। এমনকি বর্তমান সরকার স্কুলের পাঠ্য বই থেকে মাওলানার জীবনীকে সংকুচিত করেছে এবং তার নামে প্রতিষ্ঠিত স্থাপনার নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে তাকে ইতিহাসের আড়ালে রাখার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত ১৭ই নভেম্বর মাওলানা ভাসানী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার, পরিষদের আহবায়ক আজহারুল হক মিলন এবং পরিচালনা করেন সদস্য সচিব নাজমুল আলম শ্যামল। অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমেদ, মঈনুদ্দীন নাসের, আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, ফারাক্কা আর্ন্তজাতিক কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান সালু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম এআজিজ, কমিউনিটি লিডার আবদুর রহমান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও মূলধারার রাজনীতিবিদ মজিব উর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস আহমেদ, আলী ইমাম শিকদার, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, এডভোকেট মুজিবুর রহমান প্রমুখ। মাওলানা ভাসানীর উদ্দেশ্যে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান সাকিনা ডেনী ও মাহমুদা বেগম ভুঁইয়া। সভায় মাওলানা ভাসানীর পরকালীন কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত করেন মুফতি ইসমাইল।

No comments

Powered by Blogger.