গর্ভ থেকেই হাসছে লিও

তখনও পৃথিবীর আলো দেখেনি সে। মায়ের গর্ভই তার জগৎ। আপন ভুবনে অজানা কোন আনন্দের পরশে তার মুখজোড়া হাসি। গর্ভে বসে হাসছে লিও ডেভিড হারগ্রিভস। চতুর্মাত্রিক আল্ট্রাসাউন্ডে ধরা পড়ে বিরল সে দৃশ্য। এখন তার বয়স পাঁচ মাস। মুখের হাসিটা আছেই। হেসেই চলেছে লিও। একেই যেন বলে সদা-হাস্য। লিও’র মা এমি ক্রেগ যখন ৩১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তখন করা হয়েছিল ৪-ডি আল্ট্রাসাউন্ড। এতে স্পষ্ট দেখা যায় গর্ভের ভেতরে থাকা অবস্থায়ই লিওর মুখে যেন লেগে ছিল স্বর্গীয় এক হাসি। লিও’র হাস্যোজ্জ্বল মুখের অভিব্যক্তি আচ্ছন্ন করলো এমিকে। মাতৃত্বের অন্যরকম এক অনুভূতির স্বাদ পেলেন তিনি। যিনি স্ক্যান করছিলেন তিনিও অভিভূত হলেন। বার্নলির বেবিবন্ড আল্ট্রাসাউন্ড ডিরেক্ট ক্লিনিকের এক মুখপাত্র বললেন, আমরা হয়তো বিনা দ্বিধায় বলতে পরি এমির সন্তান আমাদের দেখা সব থেকে সদা-হাস্য শিশু। এমি ও তার সঙ্গী লেইটন হারগ্রিভস ল্যাঙ্কাশায়ারের অ্যাক্রিংটন এলাকার চার্চ গ্রামের অধিবাসী। তারা জানালেন, ৩০শে জুন জন্ম হবার পর থেকে লিওর মুখ জুড়ে মৃদু হাসি লেগেই আছে। ইতিমধ্যে মডেলিং কোম্পানি, নামীদামি ফ্যাশন চেইন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে লিওকে বিজ্ঞাপনে সাইন করার জন্য। গর্ভে সন্তানের হাসিমুখ দেখার অনুভূতি কেমন ছিল সে প্রশ্নের উত্তরে এমি বলেন, লেইটন আর আমি পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, এমনকি যারা স্ক্যানটি করেছিল তারাও আশ্চর্য হয়েছিল। জন্ম হবার পরও সে সবসময়ই হাসছে। এমনকি যখন ঘুমোচ্ছে তখনও। রাস্তায় লিওকে নিয়ে বের হলে মানুষজন কাছে এসে বলে, কি দারুণ একটা বাচ্চা। এমি পেশায় একজন পুনর্বাসন সহযোগিতা কর্মী আর লেইটন একজন চিত্রকর এবং ডেকোরেটর। লিও’র পেছনে যে ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপনের মডেল হবার জন্য শোবিজ জগতের লোকজন লাইন দিয়েছে সে বিষয়ে লিওর বাবা বললেন, এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আমি মডেলিংয়ের বিষয়ে আগ্রহী তবে লিও একটু বড় হলে তারপর। বৃটেনের গণমাধ্যমগুলোতে দারুণভাবে লিও’র গল্প উঠে এসেছে। মিরর লিখেছে, সুপার-স্মাইলি লিও’র সঙ্গে পরিচিত হোন- সে এতোটা খুশি যে মায়ের পেটেও তার মুখে ছিল হাসি। ডেইলি মেইল বলছে লিওকে ইতিমধ্যে বলা হচ্ছে বৃটেনের সবথেকে হাসিখুশি শিশু। আর লিও’র বাবা-মাও তেমনটাই মনে করছেন। বৃটেনের সব থেকে হাসিখুশি শিশুর তকমাটা প্রথম তারাই দিয়েছেন।
গর্ভে শিশুর অভিব্যক্তি ধারণের প্রযুক্তি চতুর্মাত্রিক আল্ট্রাসাউন্ড: প্রসূতি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর স্টুয়ার্ট ক্যাম্পবেল জানান, আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তিতে সামপ্রতিক অগ্রগতির ফলে দেখা গেছে গর্ভে শিশু হাসি, কান্না আর চোখের পলক ফেলে থাকে। চতুর্মাত্রিক স্ক্যান হতে প্রাপ্ত ছবি থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রসবের জন্য প্রস্তুত হবার প্রাক্কালে অনাগত শিশুরা নানা ধরনের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলে চেহারায়। প্রফেসর ক্যাম্পবেল যুগান্তকারী এ প্রযুক্তির স্ক্যানার ব্যবহার করছেন ২০০১ সাল থেকে। তখন থেকেই তিনি গর্ভের শিশুদের মুখে এমন অভিব্যক্তি দেখতে পেয়েছেন। ৪-ডি স্ক্যানার একের পর এক পুঙ্খানুপুঙ্খ ৩-ডি ছবি তৈরি করে যা ‘রিয়েল টাইমে’ মনিটরে আসতে থাকে এবং ত্রিমাত্রিক ভিডিও আকারে প্রতিভাত হয়। এ স্ক্যানের বদৌলতে দেখা গেছে শিশুরা হাত পায়ের আঙ্গুল নড়াচড়া করে ১৫ সপ্তাহে, হাই তোলে ১৮ সপ্তাহে আর হাসি, কান্না, চোখের পলক ২৬ সপ্তাহে গিয়ে। প্রফেসর ক্যাম্পবেল বলেন, আগে ধারণা করা হতো জন্মের পর মাকে দেখাদেখি হাসতে শেখে শিশুরা। সাধারণত নবজাত শিশুদের বয়স ৬ সপ্তাহ হলে তারা হাসতে শুরু করে। গর্ভের ভেতর শিশুর চোখের পলক ফেলা, শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার মতো অভিব্যক্তির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গর্ভে অন্ধকার পরিবেশে তাদের চোখের পলক খোলা, বন্ধ করাটা নিশ্চিতভাবে এক প্রকার ‘রিফ্লেক্স’। গর্ভাশয়ে তারা নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অভিব্যক্তি করে কিন্তু সেখানে কোন বাতাস নেই আর তারা চোখের পলক ফেলে কিন্তু সেখানে কোন আলো নেই। কাজেই এতে মনে হয় যে তারা জন্মগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তিনি হাসির পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না। তিনি বলেন, হাসি হয়তো ‘রিফ্লেক্স’ হতে পারে কিন্তু জন্মগ্রহণের প্রস্তুতি বলা যাবে না। হাসির পেছনে আসলে কি, আমি বলতে পারছিনা তবে মুখ-জুড়ে হাসি হয়তো এটাই ইঙ্গিত দেয় যে শিশুটি ওই গর্ভে আরামদায়ক পরিবেশে আছে।

No comments

Powered by Blogger.