ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১২ মামলায় রায় প্রদান, তিনটি মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) এবং দুটি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রায় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা তিন মামলার আসামিরা হলেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন ও জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের (পলাতক) মামলায় বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ দুই আসামির বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলার শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। শিগগিরই অপেক্ষমাণ থাকা তিন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, আব্দুস সুবহান ও আব্দুল জব্বারের বিষয়ে আনা মামলায় বর্তমানে যুক্তিতর্ক পেশ চলছে। যুক্তিতর্ক শেষ হলেই মামলার রায় ঘোষণা বিষয়ে আদেশ দেবে ট্রাইব্যুনাল। গত ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ট্রাইব্যুনালের দ্বাদশ রায়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনীত মামলায় আরো এগারটি রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রোকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি। এর পর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আপিলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যা গত বছর ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। গত বছর ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পঞ্চম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে গত বছর ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি অপেক্ষমাণ থাকাবস্থায় গত ২৩ অক্টোবর কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। গত বছর ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। গত বছর ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। গতবছর ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দণ্ড ভোগের মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে গত ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ৭১’ এর দুই আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে গত বছর ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক রয়েছেন। ফলে তারা আপিলের সুযোগ পাননি। দশম রায়ে গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। তার আইনজীবীরা জানান, আইন অনুযায়ী রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। একাদশ রায়ে গত ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তার আইনজীবী জানান আইন অনুযায়ী রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার ছিলো যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন গঠন করা হয়। প্রথমে একটি ট্রাইব্যুনালে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে এ বিচারকে ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠনের পর ট্রাইব্যুনালে তিনটি এবং আপিলে দুটি মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। সূত্র: বাসস

No comments

Powered by Blogger.