ওবামার আদেশ অবৈধ: রিপাবলিকান দল

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা ইসাবেল মেদিনা (৪১)
দুই ছেলে জিমি (মাঝে) ও রায়ানকে সঙ্গে নিয়ে
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ওবামার ভাষণ শোনেন।
অবৈধ অভিবাসীদের বৈধভাবে কাজের সুযোগ
দেওয়ার ঘোষণায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর জন্য বৈধভাবে কাজ করার সুবিধা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আইনসভা কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ওবামার আলোচিত এ নির্বাহী আদেশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ না হলেও অভিবাসীদের সংগঠনগুলো এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। অন্যদিকে বিরোধী দল রিপাবলিকানসহ রক্ষণশীলেরা এতে ক্ষুব্ধ। বারাক ওবামার ঘোষণার বড় দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বসবাসকারীরা এখন থেকে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না। উচ্চ ডিগ্রিধারী এবং দক্ষ প্রযুক্তিকর্মীরাও বৈধতার এ সুযোগ পাবেন। এ সুযোগ নিতে হলে আবেদন করে নিবন্ধন করতে হবে। দিতে হবে যথাযথ ফি এবং কর। আবার এটা স্থায়ী সমাধানও নয়। তার পরও একে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিবাসনবিষয়ক সংস্কার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেন। রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই বক্তব্যে ওবামা বলেছেন, তাঁর এ নির্বাহী পদক্ষেপ অবৈধদের প্রতি কোনো ‘সাধারণ ক্ষমা’ নয়। সম্প্রতি যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে অবৈধভাবে বাস করছেন, তাঁরা এ থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না। ভবিষ্যতেও যাঁরা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের জন্যও এ ঘোষণা কার্যকর নয়। এ ছাড়া যেসব অবৈধ অভিবাসীর নামে মামলা আছে, যাঁরা আদালতে দণ্ডিত বা কোনো অপরাধে জড়িত, তাঁরা এই আদেশের সুবিধা নিতে পারবেন না।
এর আগে যাঁদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে ঘোষণায় কিছু বলা হয়নি। এই পদক্ষেপ যে যুক্তরাষ্ট্রের লেজেগোবরে হয়ে যাওয়া অভিবাসন সমস্যার জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন ওবামা। বক্তব্যে তিনি বলেছেন, অভিবাসন আইনের ভয়ে যাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অবৈধ হওয়ায় যাঁরা কম মজুরি পাচ্ছেন এবং কর্মক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, তাঁদের জন্য এই ঘোষণা সাময়িক সুবিধা দেবে। এ জন্য তিনি সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার আইন প্রস্তাব গ্রহণের জন্য উভয় দলের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানান। ওবামা বলেন, ‘যে দিনটিতে আমি সমন্বিত অভিবাসন আইনে সই করব, সেদিন থেকেই এ নির্বাহী আদেশ অকার্যকর হয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অভিবাসন সংস্কার নিয়ে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে নানা টানাপোড়েন। রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট ওবামার চলমান মেয়াদ পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে। আইনপ্রণেতারা কংগ্রেসে অভিবাসন নিয়ে কখনোই মতৈক্যে পৌঁছতে পারেননি। ওদিকে অভিবাসী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ওবামার ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি অঙ্গীকার রক্ষায় কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেন। ওবামার সমালোচনা: বারাক ওবামার একতরফা পরিকল্পনাকে সামনে এগোতে দিতে চায় না রিপাবলিকান শিবির। তারা ওই পরিকল্পনাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর কথা বলেছে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান নেতা জন বোয়েনার বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র যেভাবে কাজ করে, এটা কোনোমতেই তা নয়। প্রেসিডেন্ট বলে আসছেন, তিনি “রাজা” নন, “বাদশাহ” নন। কিন্তু এখন তিনি “রাজা-বাদশাহ”র মতোই আচরণ করলেন।’ আর প্রতিনিধি পরিষদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল ওবামার অভিবাসী পরিকল্পনাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং দেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.