ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতায় বড় হয়ে ওঠার গল্প by সমীর রঞ্জন নাথ ও গৌতম রায়

শিশুশিক্ষা একসময় শুরু হতো প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে, এখন শুরু হয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জনগুলোর মধ্যে এটিও একটি। বাংলাদেশে শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই একাধিক ধরনের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। তাতে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়, যদি প্রতিটি স্তর অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে। মানসম্মত শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাক্রম, অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ, প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেতৃত্বের গুণাবলী এবং সার্বিক তদারকি। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে শিক্ষার সব স্তরেই মানসম্মত শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন থাকলেও মোটা দাগে তা মেনে চলার প্রবণতার অভাব রয়েছে। শিক্ষার স্তরভেদে ন্যূনতম ব্যবস্থা ঠিক করার দায়িত্ব সরকারের শিক্ষা বিভাগের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তা মেনে চলছে কিনা, তা দেখার দায়িত্বও ওই বিভাগেরই। উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
ফলে একেক ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একেক ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে। এর অবধারিত ফল হল প্রতিষ্ঠানের ধরনভেদে শিক্ষার্থীদের মানের ভিন্নতা। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে যেহেতু মানসম্মত শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম শিক্ষাও পাচ্ছে না। শিশুকাল থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যার শুরু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাদের রয়েছে নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, উচ্চবিদ্যালয় এবং মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র অন্যতম।
মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের এক গবেষণাপত্র অনুসারে ১৯৯৩-২০০৮ সময়কালে চারটি পর্যায়ে প্রায় ৩৭ লাখ শিক্ষার্থী মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পে উপর্যুক্ত সময়ে খরচ হয়েছে ২৪৪ কোটি টাকারও বেশি। পঞ্চম পর্যায় বর্তমানে চলছে, যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৬শ’ কোটিরও বেশি টাকা। গণসাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত এডুকেশন ওয়াচের সর্বশেষ গবেষণা মতে, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ ভর্তি হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে, অন্য শিশুদের মতো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। একইভাবে এই শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই না পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বই পড়ে। সুতরাং ৪/৫ বছর বয়সেই শিক্ষাক্রমের দিক থেকে এই শিক্ষার্থীরা একই বয়সী অন্যদের তুলনায় আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
এডুকেশন ওয়াচের গবেষণা থেকে এও জানা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালিত হয় মসজিদগৃহে, এক-তৃতীয়াংশ মসজিদের বারান্দায় এবং কিছুসংখ্যক বাইরে। অর্ধেকের বেশি সংখ্যক শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা শুধু মেঝেতে বসে, বাকিরা নানা ধরনের চট বিছিয়ে বসে। পরিকল্পনা কমিশনের গবেষণা মতে, শিক্ষকদের ৭৩ শতাংশ মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন। এদের বেশিরভাগই শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন মাদ্রাসায়; এর মধ্যে সাধারণ মাদ্রাসা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে হাফিজিয়া, কওমি ও খারিজি মাদ্রাসা। শিক্ষকদের ৪৩ শতাংশের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই; বাকিরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ওপর স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। কমিশনের গবেষণা বলছে, গণিত ও ইংরেজিতে এই শিক্ষকরা বিশেষভাবে কাঁচা।
বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও চার্ট, ছবি আঁকার সরঞ্জাম, গান, নাচ, অভিনয় ও শারীরিক কসরতের ব্যবস্থা যে কোনো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য অপরিহার্য। এগুলোই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিশেষায়িত শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষার এ স্তরে পাঠ্যবই গৌণ উপকরণ। অথচ মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রে বইই ভরসা। অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের অভাবে কেন্দ্রগুলোতে প্রাথমিক ও উচ্চ স্তরের মতো শুধু বই ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে এই শিক্ষার্থীরা প্রাক-প্রাথমিকের যে মৌলিক শিক্ষাদর্শন তার কিছুই পায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৬ শতাংশ শিক্ষাকেন্দ্রে বই ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা উপকরণ নেই। বাকিগুলোতে কয়েকটি করে চার্ট দেখতে পাওয়া গেছে। নানা উপকরণ ব্যবহার করে আনন্দের মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার কোনো ব্যবস্থা এই কেন্দ্রগুলোতে নেই।
গবেষক দলের পক্ষ থেকে শিক্ষাদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে যা দেখা গেল, তার সঙ্গে কোনোভাবেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা মেলে না। শিক্ষকদের কাছে প্রাক-প্রাথমিকের উপযুক্ত শিক্ষণ প্রণালী অনুসরণ করার চেয়ে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি মোটেও অস্বাভাবিক নয়, কারণ মসজিদের পবিত্রতা বলতে কী বোঝায় তার একটি ধারণা সমাজের রয়েছে। এটি রক্ষা করা ইমাম বা মুয়াজ্জিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র দায়িত্বও বটে। শিক্ষকরা মনে করেন, মসজিদে কোনো প্রকার ছবি টানানো কিংবা ছবি আঁকা নিষেধ। ফলে কেন্দ্রের শিক্ষণপ্রণালীতে কোনো ধরনের চার্টের ব্যবহার নেই এবং শিক্ষার্থীরা ছবি আঁকা বা রঙ পেন্সিলের ব্যবহার ধরনের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে না। একইভাবে সঙ্গত কারণেই মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে সেখানে কোনো প্রকার শারীরিক কসরত কিংবা নাচ, গান বা অভিনয় করতেও মানা। মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কার্যক্রম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের বেশিরভাগ শিক্ষক হয় মসজিদের ইমাম না হয় মুয়াজ্জিন। তারা সমাজের ধর্মীয় নেতা। ধর্মসংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সমাজের লোকজন তাদেরই শরণাপন্ন হন। ফলে সমাজে এই শিক্ষকদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তুলনায় বিশেষ এক স্থান রয়েছে। এই স্থানটি ধরে রাখা ধর্ম পালনের তাৎপর্যের দিক থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, এ কারণেই তাদের পক্ষে নেচে-গেয়ে বা অভিনয় করে শিক্ষাদান করা বেমানান। আবার ইমাম বা মুয়াজ্জিন হিসেবে তারা এমনিতেই তা করতে পারেন না, মসজিদের ভেতর করার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ফলে শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষণপ্রণালীতে এসবের কোনো বালাই নেই।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যাপারেও একই ধরনের বিধি-নিষেধের প্রশ্ন এসে যায়। যেসব মসজিদের বাইরে একটু জায়গা আছে এবং যেসব কেন্দ্র মসজিদের বাইরে অবস্থিত সেখানে এই বিধি-নিষেধ নেই। যেহেতু বেশিরভাগ শিক্ষাকেন্দ্রই মসজিদের ভেতর অবস্থিত, তাই খুব কম ক্ষেত্রেই এই সুবিধা পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ শতাংশেরও কম কেন্দ্রে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় এবং এক-তৃতীয়াংশে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাতে এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শিখতে হয় শিশুকাল থেকেই। মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে এরা এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা থেকে বঞ্চিত থাকছে।
তাহলে মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা শিখছে কী? ‘কায়দা ও দ্বীন শিক্ষা’ এবং বাংলা, গণিত ও ইংরেজির সম্মিলনে ‘আমার প্রথম পড়া’। এগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার না করেও বলা যায় শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, ছবি আঁকা ও খেলাধুলার মতো সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রতি এক ধরনের বিরূপ মনোভাব নিয়ে বড় হচ্ছে। কারণ শিক্ষকরা শুধু যে এসব কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখছেন তাই নয়, এগুলোকে পবিত্রতা-অপবিত্রতার সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর কোমল মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করছেন। শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কাজ সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে। সমবয়সী অন্যদের তুলনায় এই শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ভিন্ন মানসিকতা অর্জন করছে এবং তা সরকারি অর্থানুকূল্যে। স্পষ্টতই বলা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যে অভীষ্ট লক্ষ্য, তা মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বর্তমানে যেভাবে চলছে তা দিয়ে অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আরও মৌলিক প্রশ্ন হল, একই বয়সী অন্য শিশুদের তুলনায় ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অর্থানুকূল্য প্রদান করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না? এ ধরনের মানসিকতা রূপকল্প ২০২১ বা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ গড়তে কী ধরনের বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে? বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষা বিস্তারের যে নির্দেশনা দেয়া আছে, তার সঙ্গেও তো এসব যায় না। তদুপরি সরকারের শিক্ষানীতি এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তার সঙ্গেও তো সরকারের এই দায়িত্ব মেলে না।
দেখা যাচ্ছে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার চাহিদা এবং মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার আচার পরস্পরবিরোধী। প্রশ্ন হল, পরস্পরবিরোধী দুই প্রণালীকে একীভূত করা সম্ভব কি? একদিকে যেমন মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার ধারণার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়, একইভাবে প্রাক-শৈশবের চাহিদা থেকে শিশুদের বঞ্চিত করাও উচিত নয়। সমাধান খুঁজতে হবে সম্ভবত দুটিকে আলাদা করার মাধ্যমে, যার যা কাজ তাকে তা করতে দেয়ার নীতি গ্রহণ করে। সাধারণভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তো প্রাক-শৈশব উন্নয়ন কিংবা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করার কথা নয়, কারণ এর পারদর্শিতা অন্যত্র। ধর্ম পালন ও শিক্ষাগ্রহণের জন্য পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান হলে, শিক্ষকরা আলাদা হলে বিরোধ ঘটার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি এই শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব নেয় তবে দুই কূলই রক্ষা পায়। এ মুহূর্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরো দায়িত্ব নিতে না পারলে কয়েক বছরের জন্য এ কাজে দক্ষ এনজিওদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। যে শিশুরা সকালবেলা মসজিদে কোরআন শরিফ পড়তে আসে তাদের নিকটবর্তী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষালয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে এবং নামাজ পড়তে আসা অভিভাবকদের এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা অবদান রাখতে পারেন। বিষয়টি সরকার ভেবে দেখতে পারে। সমাধানের আরও পথ থাকতে পারে, সেগুলোও পরীক্ষা করে দেখা দরকার। শিশুর শিক্ষার অধিকার রক্ষায় বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
সমীর রঞ্জন নাথ ও গৌতম রায় : এডুকেশন ওয়াচ গবেষণা ২০১৩-এর প্রধান ও সহ-গবেষক

No comments

Powered by Blogger.