এপারে মা, ওপারে মেয়ে

ছবিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দপুর সীমান্তে কাঁটাতারের এপার থেকে মা নাইনি রানী কথা বললেন ওপারে মেয়ে রশনা রানীর সঙ্গে। গতকালের ছবি l প্রথম আলো এপারে মা। ওপারে মেয়ে। মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরস্পরকে না দেখার তৃষ্ণা তাঁরা মেটানোর চেষ্টা করলেন কাঁটাতারের দুই পাশে থেকেই। কাঁদলেন দুজনেই। গতকাল শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গোবিন্দপুর সীমান্তে দেখা হয় ওই মা ও মেয়ের। বছরের একটিমাত্র দিনে স্বজনদের দেখার টানেই দুই বাংলার হাজারো মানুষ ছুটে যান গোবিন্দপুর সীমান্তের ওই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে। মিলিত হন স্বজনদের সঙ্গে। সেরে নেন মনের কথা। বিনিময় করেন শুভেচ্ছা। আর বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। ঠাকুরগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী থেকে মেয়েকে দেখতে এসেছেন নাইনি রানী (৫৮)। তাঁর মেয়ে রশনা রানী পশ্চিবঙ্গে থাকেন। মা-মেয়ে পরস্পরকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা জানালেন, প্রায় পাঁচ বছর হলো মেয়েকে দেখেননি। পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য নেই বলে মেয়েকে দেখার জন্য এই দিনের অপেক্ষায় ছিলেন। মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য পোলাও রান্না করে এনেছিলেন তিনি। মেয়েও তাঁকে একটি চাদর দিয়েছেন বলে জানালেন।
এলাকাবাসী জানান, যুগ যুগ ধরে কুলিক নদের ধারে কালীপূজার আয়োজন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। কালীপূজার পরের শুক্রবার ওই এলাকায় বসে পাথর কালীমেলা। সেই মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর এক দিনের জন্য সীমান্তে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়। আর এই সুযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ কাঁটাতারের বেড়ার দুই ধারে দাঁড়িয়ে সহজেই দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা সেরে নেন স্বজনদের সঙ্গে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে গোলবানু (৬৫) তাঁর ভাইপো পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ জেলার চানমারি এলাকার মজিবর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে সীমান্তে এসেছেন। মিনিট বিশেক কথা বলেন তাঁরা। এরপর হাতের একটি ব্যাগ ছুড়ে দেন ভাইপোর দিকে। তিনি জানালেন, ভাইপোর সঙ্গে বাড়ির জমিজমা নিয়ে কথা হলো।

No comments

Powered by Blogger.