দোহার-নবাবগঞ্জে লড়াই জমবে by অমরেশ রায়/ইব্রাহীম খলিল

দু'জনই প্রতিমন্ত্রী। একজন 'সাবেক', আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। অন্যজন 'বর্তমান', জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের এ দুই প্রার্থীর লড়াই এখন জমে উঠেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, দুই প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের যেন ঘুমও হারাম। ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ, নির্বাচনী জনসভা ও কর্মিসভার পাশাপাশি এলাকায় দুই প্রার্থীর পক্ষেই ভোট চেয়ে চলছে ব্যাপক মাইকিংও। ঢাকা-১ আসনটি ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসন থেকে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের আবদুল মান্নান পান এক লাখ ২১ হাজার ৪৪০ ভোট। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দুই উপজেলার ১০২টি ভোটকেন্দ্রের ৪৬২টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। মান্নান খানের প্রধান বাধা দলীয় 'বিদ্রোহ' ও অন্তর্দ্বন্দ্ব :এই আসনের বর্তমান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান তার সময়ের পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়ন কম করেননি। এমন কথা তার প্রতিপক্ষও অস্বীকার করেন না।
গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। দলের একটি বড় অংশই এখন মান্নান খানের বিরুদ্ধে রীতিমতো 'বিদ্রোহ' ঘোষণা ও বিরোধিতা করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে প্রকাশ্যে নেমে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে জেলা-উপজেলা নেতাদের অনেকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের হলফনামায় গতবারের চেয়ে ২০৭ গুণ বেশি সম্পদ অর্জনের তথ্যের ব্যাপক প্রচারণাও কিছুটা তার বিপক্ষে গেছে। দলীয় এই অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দলের জের ধরে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক যৌথসভায় উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট জামালউদ্দিন আহমেদ, আবদুল জব্বার ভূইয়াসহ বেশিরভাগ নেতার লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার এবং সুলনা ইউনিয়নে মান্নান খানের পক্ষের নির্বাচনী পথসভায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে।
দলের ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল বাতেন মিয়া, দোহার উপজেলার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহসান খোকন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনারকলি পুতুল, বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লাসহ অনেকেই লাঙ্গলের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। অপর দুই প্রভাবশালী নেতা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি সালমান এফ রহমান এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নূর আলী নীরব থাকলেও তাদের সমর্থকরাও ভেতরে ভেতরে সালমা ইসলামের পক্ষে নেমেছেন বলেও জানা গেছে। অবশ্য মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীর সমর্থন ও প্রচার-প্রচারণায় মান্নান খান খুব একটা পিছিয়ে নেই।
জানতে চাইলে দোহার উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাঁচ বছরে নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, দলীয় কর্মকাণ্ডে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, আত্মীয়করণ এবং দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, নীতি-আদর্শের কথা বললেও পত্র-পত্রিকায় তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের যেসব খবর আসছে তাতে আমরাও বিস্মিত।
তবে নবাবগঞ্জের কলাকোপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সাঈদুর রহমান বলেছেন, দলের মধ্যে যারা মান্নান খানের বিরোধিতা করছেন তাদের রাজনীতি ঢাকাকেন্দ্রিক এবং তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কহীন। তারা ছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরাট অংশ মান্নান খানের পক্ষে।
সালমা ইসলামের ভরসা :এ আসনে জাতীয় পার্টির ভোট তেমন একটা না থাকলেও দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই দলীয় প্রার্থী সালমা ইসলামের পক্ষে একাট্টা হয়েছেন। এর বাইরে জাপা প্রার্থীর ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিদ্রোহের পাশাপাশি নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির ভোটব্যাংকও। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতাদের বেশিরভাগই তার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার এলাকার বিএনপি নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের প্রভাবিত করে নীরব বিএনপির ভোটারদের তার পক্ষে আনার কাজে তিনি অনেকটা সফল হয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের এমপি হিসেবে এলাকায় টিআর ও কাবিখা ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে উন্নয়নকাজও তার পক্ষে জনসমর্থন বাড়িয়েছে বলে তার সমর্থকরা মনে করছেন। রাজনীতিতে ব্যক্তিগত 'ক্লিন ইমেজ' এবং শিল্পপতি স্বামী নুুরুল ইসলাম বাবুলের প্রভাবও তার জন্য বাড়তি সুবিধা হবে। নারী প্রার্থী হিসেবে নারী ভোটারদের অধিক আনুকূল্য সালমা ইসলাম পাবেন বলে কেউ কেউ মনে করে।
দুই প্রার্থী যা বললেন :জানতে চাইলে দুই প্রার্থীই জয়লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে সমকালকে জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান বলেছেন, তিনি এলাকার মানুষকে যে উন্নয়ন, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যের রাজনীতি উপহার দিয়েছেন তাতে মানুষ তাকে গতবারের চেয়েও বেশি ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে তার দৃঢ়বিশ্বাস। এলাকার দলীয় নেতাদের একাংশের বিরোধিতার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মূলত দুই উপজেলার নগণ্য সংখ্যক ৪-৫ জন নেতা, যারা গত পাঁচ বছরে অবৈধ ও অন্যায় সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেননি, তারাই নৌকার বিপক্ষে নেমেছেন। এছাড়া প্রতিপক্ষও ব্যাপক টাকা ছড়িয়ে তাদের নিজের পক্ষে কাজ করাচ্ছেন। দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেছেন, জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তিনি। জনগণও তাকে সমর্থন দিয়ে তার পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। তারাও বুঝেছেন কাকে ভোট দিলে কাজ হবে। এ বিচারে জনগণই তাকে ভোট দিয়ে পাস করাবেন ইনশাল্লাহ। টাকা ছড়িয়ে প্রতিপক্ষ ও বিএনপি নেতাদের তার পক্ষে মাঠে নামানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েই তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। জয়লাভের ব্যাপারে তিনিও খুব আশাবাদী।

No comments

Powered by Blogger.