উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন by শাহেদ চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার পীরগঞ্জে বিশাল জনসভায়
(পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হরতাল-অবরোধ দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গরিবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বেগম জিয়ার প্রাণভোমরা হলো জামায়াত। তিনি দাবি করেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও পাকিস্তানি সংস্থা আইএসআই জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে জামায়াত-বিএনপির ধ্বংসাত্মক অপকর্মের বিপরীতে। আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির উন্নয়ন, কল্যাণ ও শান্তির রাজনীতির পক্ষে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে আরেকবার দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পীরগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারকালে জনসভা ও কর্মী সমাবেশে ভাষণ দেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতার কড়া সমালোচনা করে বলেন, গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলা যাবে না। গোপালগঞ্জ স্বাধীনতা দিয়েছে। যারা মিথ্যার বেসাতি করে তাদের নাম নিশানা মুছে যাবে। যারা গোপালগঞ্জের নাম মুছে দিতে চান তাদেরই নাম নিশানা থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বেগম জিয়া আলোচনা চান না, ধ্বংস চান। তাকে সংলাপে আসার আহ্বান জানানো হলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পীরগঞ্জের খালাসপীর এলাকা হয়ে টুপুরিয়া গ্রামের তরফ মৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভাস্থলে পেঁৗছান। এরপর তিনি তার শ্বশুরবাড়ি লালদীঘি ফতেহপুর গ্রামে কর্মী সমাবেশে ভাষণ দেন। এর আগে প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়াসহ শ্বশুর-শাশুড়ির কবর জিয়ারত করেন। পরে জয় সদনে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেন। শেখ হাসিনা সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে পেঁৗছালে তাকে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হকসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্বাগত জানান। তারা বিমানবন্দর এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন।
নীলফামারী ও রংপুর সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন চলাকালে অস্থির হয়ে উঠেছিল। আন্দোলন চলাকালে সড়কের দু'পাশে গাছ কাটা ছাড়াও হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ই নিজের নির্বাচনী এলাকায় গেলেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগমনের প্রতিবাদে স্থানীয় ১৮ দল রংপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করলেও গতকাল এর তেমন প্রভাব চোখে পড়েনি। স্থানীয় অফিস-আদালত, দোকান-পাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল। যান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। এ এলাকায় শেখ হাসিনার বিপক্ষে লড়ছেন জাতীয় পার্টির নূর আলম যাদু। নির্বাচনী এলাকার কোথাও তার কোনো পোস্টার-ফেস্টুন দেখা যায়নি। তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভোট প্রত্যাশা করে পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে।
তরফ মৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালে সমবেত জনতা স্লোগান তোলেন 'হামরা সবাই ধিম, নৌকাত ভোট, হাসিনা বৌমা প্রধানমন্ত্রী হউক।' এ জনসভা ছাড়াও জাহাঙ্গীরাবাদ ও বড়দরগা এলাকায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, জয় আপনাদের সন্তান। সে আপনাদের মাঝে আসবে। এ সময় জনতা পাল্টা স্লোগান তোলেন, 'হামার ছাওয়া জয় ভাতিজা পরের ভোটে তোমাক হামরা চাই'। শেখ হাসিনা তার ভাষণে নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ খুন করছেন, পানিতে ফেলে খুন করছেন শিশু। তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন না, নির্বাচন ঠেকাবেন। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হবে এটাই তো স্বাভাবিক। বেগম জিয়ার সঙ্গে ফোনালাপ ও মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির প্রথম দিনে তার বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া টেলিফোনে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা বলার মতো নয়। তিনি (খালেদা জিয়া) ঢাকা অবরোধ ডেকেছেন, কিন্তু পতাকা হাতে নিয়ে কেউ সাড়া না দিলে কার দোষ। তিনি নারী পুলিশদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ওপর তার যত রাগ। তিনি গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলতে চান। অথচ এ গোপালগঞ্জে জন্ম নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আমাকে খুন করতে চেয়েছেন। গ্রেনেড হামলা চালিয়েছেন। ওই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তার ছেলে ও মন্ত্রিসভার সদস্য। তাহলে তিনি যে জড়িত নন তা নিশ্চিত হই কীভাবে? এর আগে নির্বাচনী এলাকার প্রবেশদ্বারে এসে পেঁৗছলে তাকে স্বাগত জানায় শেখ হাসিনা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবদুস সামাদ মিয়ার সভাপতিত্বে টুকুরিয়ার জনসভায় বক্তৃতা করেছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট ফজলে রাবি্ব মিয়া এমপি, আতাউর রহমান বাবুল, আবুল কালাম আজাদ এমপি, খলিলুর রহমান, মকবুল হোসেন প্রমুখ। ফতেহপুর গ্রামে শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ির আঙিনায় কর্মী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোতাহারুল হক বাবলু। বক্তৃতা করেছেন খায়রুল ইসলাম লাবলু, মিয়া মোহাম্মদ তাজিমুল ইসলাম শামীম ও সাইফুল ইসলাম দুলাল। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর এমপি, শেখ হেলালউদ্দিন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, এসএম কামাল হোসেন, এপিএস-২ অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর।
শেখ হাসিনার ঝটিকা এ নির্বাচনী সফরকে কেন্দ্র করে গোটা পরীগঞ্জে সাজ সাজ রব পড়ে। জনসভায় তিল ধারণের ঠাইও ছিল না। উপস্থিত জনতা যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরে শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শেখ হাসিনা জনতার উদ্দেশে বলেছেন, গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠন জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলেই নির্বাচন থেকে বিরোধীদলীয় নেতা পিছুটান দিয়েছেন। সরকার গঠনে ৫২ দিনের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু'দিনের মধ্যে ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএসআই জড়িত ছিল। আন্তর্জাতিক তদন্তে এর প্রমাণ মিলেছে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত অপরাধীদের আইনগত সহায়তা দিয়েছেন। তারা বিচার প্রক্রিয়া থামাতে নানা অপচেষ্টা করেছেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, খুনিদের মদদ দেওয়াই বেগম জিয়ার চরিত্র।
শেখ হাসিনা গত নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করায় পীরগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার ওয়াদা পূরণ করেছি। রংপুর বিভাগ ও রংপুর সিটি করপোরেশন করেছি। রংপুরে রাস্তাঘাট ও ওয়াজেদ মিয়া সেতু করেছি। আওয়ামী লীগ কৃষক-শ্রমিক ও জনদরদি সরকার বলেই তিন দফায় সারের দাম কমানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। বর্তমান সরকার বিনা পয়সায় বই বিতরণসহ নানারকম শিক্ষা সুবিধা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মা-বোনদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। ওরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়েছে। এদের বিচার শুরু হয়েছে এখন। কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। খালেদা জিয়া তাদের রক্ষা করতে চান। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না।

No comments

Powered by Blogger.