ভালো মুনাফা করতে পারেনি ব্যাংক খাত by ওবায়দুল্লাহ রনি

আগের বছরের মতো সদ্য বিগত বছরে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় মিশ্র প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এর আগে কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ ব্যাংকের উচ্চ মুনাফা হলেও গত দুই বছর এ চিত্র বদলেছে। ২০১৩ সালে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আবার কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, এবার মুনাফায় বড় ধরনের পতন হবে। তবে শেষ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় স্থগিত সুদ আয়ের বড় একটি অংশ পরিচালন মুনাফায় যোগ হয়েছে। ফলে মুনাফায় যে ধরনের নেতিবাচক প্রবাহের কথা ভাবা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় সবগুলোই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে ২০১৩ সালের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পেশ করবে। এর পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, বিএসইসি প্রকাশের আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ ও ১০ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফার বড় একটি অংশ এসেছিল শেয়ারবাজার থেকে। তবে শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে ২০১১ সাল থেকে মুনাফা তেমন দেখা যাচ্ছে না। এর আগে ২০১১ সালে বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছিল। সব ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রভিশন ও কর বাদ দিয়ে তাদের নিট হয়েছিল ৯ হাজার ১২১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে যা ৮ হাজার ৭৭ কোটি টাকা ছিলো।
গেল বছরের শুরু থেকেই আশানুরূপ হারে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে যা ১৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এ ছাড়া আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আগের মতো না হওয়া, রেমিট্যান্স কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এ মিশ্র প্রবণতা। অবশ্য ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলসহ বেশ কিছু ছাড় দেওয়ায় মুনাফায় যেমনটি ধস হবে বলে ব্যাংকাররা মনে করছিলেন, শেষ পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি হয়েছে।
ব্যাংক খাতের সামগ্রিক মুনাফার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকের এমডি এসএম আমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো অনেক স্থগিত সুদ আয় খাতে নিতে পেরেছে। এ ছাড়া নানা অস্থিরতার মধ্যেও গত নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোটামুটি ব্যবসা করতে পেরেছে। এ সময়ে আমদানি-রফতানি আগের তুলনায় বেড়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফা খুব খারাপ হয়নি। মুনাফা বেড়েছে :গতকাল সব ব্যাংকের মুনাফার চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে যেসব ব্যাংকের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে মুনাফা বাড়ার তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক। তারা এবার ১৪৮৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছর যা ছিল ১৪৭০ কোটি টাকা। বিডিবিএলও এবার ভালো মুনাফা করেছে। তাদের মুনাফা হয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইউসিবিএল, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি, পূবালী, মার্কেন্টাইল, স্ট্যান্ডার্ড, ফার্স্ট সিকিউরিটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক আগের তুলনায় ভালো মুনাফা করেছে।
মুনাফা কমেছে :নানা অস্থিরতার মধ্যে এবার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। কমার তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংক। এবার তারা ১৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছর যা ১৩১৫ কোটি টাকা ছিল। রূপালী ব্যাংক ৩১০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর যা ৩৬৭ কোটি টাকা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বেসিক ব্যাংক এবার ১৭৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছর তাদের মুনাফা হয়েছিল ২৮৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফা কমার তালিকায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি এবার ১৬০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর যা ছিল ১৮০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল, প্রাইম, এক্সিম, এনসিসি ও শাহজালাল ব্যাংকে আগের তুলনায় মুনাফা কম হয়েছে।
নতুন ব্যাংক : চলতি বছর থেকে কার্যক্রম শুরু করা নতুন ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করতে পেরেছে। দেরিতে কাজ শুরু করায় তাদের মধ্যে এনআরবি গ্গ্নোবাল ব্যাংক কোনো মুনাফা দেখাতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.