উন্নত বিশ্বে যা পারে না, ইউনিলিভার দেশে তা করছে by মনোয়ারুল ইসলাম

লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সেরা পাঁচের প্রতিযোগী সোমার শিক্ষকরা বলেছেন, “সাদিয়া আর্জুমান্দ বানু সোমা একজন মেধাবী ছাত্রী। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ভর্তির পর থেকেই তাকে পড়ালেখায় ভীষণ মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু লাক্স-চানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার ফাঁদে পড়ে সে তার প্রখর মেধা কাজে লাগাতে পারেনি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে শিক্ষকরা বলেছেন, ইউনিলিভার উন্নত বিশ্বে যা পারে না, বাংলাদেশে তা করছে। কারণ, বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের একটি গরিব দেশ হিসেবে মনে করে তারা। উন্নত বিশ্বে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় যে সব নিয়ম-কানুন মানা হয় এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এমনকি ইউনিলিভার উন্নত দেশে যে নিয়ম মেনে চলে বাংলাদেশে তা মানছে না।
আইবিএর একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “আমার পরিবার ইংল্যান্ডে থাকে। আমি নিজেও ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেছি। সেখানে আমি দেখেছি- ইংল্যান্ডে ইউনিলিভারের কোনো প্রতিযোগিতায় বা রিয়েলিটি শোতে কোনো শিক্ষার্থীকে নিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হয়। অথচ বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো চর্চা ইউনিলিভার করে না।”

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কোনো স্টুডেন্টকে কি ইউনিলিভার এভাবে তাদের বাণিজ্যের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে? সোমাকে তারা পণ্যের মতো ব্যবহার করেছে।”

সোমাকে ঠিক কি কারণে আইবিএ থেকে ড্রপ আউট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এ ব্যাপারে আইবিএর বিবিএ প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শুরু থেকেই একই নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে। আমাদের আইবিএতে নিয়ম আছে কোনো শিক্ষার্থী পরপর দুইবার একই পরীক্ষায় সিজিপিএ ২ থেকে ২.৫ পেলে সে ড্রপ আউট হবে। আবার কেউ যদি সিজিপিএ ২-এর নিচে পায় সে-ও ড্রপ আউট হবে। আর একই কোর্সে যদি এফ গ্রেড পায় তাহলেও সে ড্রপ আউট হবে।”
Lax_Shoma
বিবিএ প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান বলেন, “সাদিয়া আর্জুমান্দ বানুর বিষয়টি পুরোপুরি অস্বাভাবিক কারণ, সে ছয় মাস মেয়াদি সেমিস্টারে একনাগারে সাড়ে তিন মাস অনুপস্থিত ছিল। পরে সে জানিয়েছে, যে সে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১২-তে অংশ নেওয়ার জন্য এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। সে প্রমাণ হিসেবে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১২ এর চুক্তিপত্র দেখিয়েছে। কিন্ত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে তাকে তো ছাড় দেওয়া যায় না। আমরা নিয়মানুসারেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তিনি বলেন, “সাদিয়া আর্জুমান্দ বানু গত সেমিস্টারে পরীক্ষায় সিজিপিএ ২.৫ এর নিচে পেয়েছিল। আর এই সেমিস্টারে সিজিপিএ ২-এর নিচে পেয়েছে। তাই কোনোভাবেই আমরা তার ড্রপ আউট ঠেকাতে পারিনি। সে ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিল। এটি পুরোপুরি অস্বাভাবিক কেস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কারণ ১৯তম ব্যাচ বা ২০তম ব্যাচে অর্থাৎ প্রথম বর্ষ বা দ্বিতীয় বর্ষে এটি হতে পারে। কিন্ত তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর জন্য এটি সাধারণত ঘটে না। সোমার ঘটনা অনেকটা নজিরবিহীন।”

তিনি বলেন, “সোমা এই দীর্ঘ সময়ে কোনো কিছু জানায়নি। সে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। সোমা ও তার পরিবার আমাদের জানিয়েছে প্রতিযোগিতার কারণে সে আমাদের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারেনি। তার পরিবার আমাদের কাছে তার একাডেমিক ক্যারিয়ার রক্ষার অনুরোধ করেছিল। তার পরিবার দাবি করেছিল, সোমাকে প্রতিযোগিতার আয়োজকরা তাকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি। তাই সে আসতে পারেনি। তবে আমরা তো নিয়মের বাইরে কিছুই করতে পারি না।”

এদিকে সোমার বড় বোন শায়লা আর্জুমান্দ বানু বলেছেন, লাক্স-চানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা আমার বোনের ক্ষতি করেছে। আমরা জানি না এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে। আমরা এখন হতাশায় ভুগছি। আমার বোন খুবই মেধাবী। তার শিক্ষাজীবনের এই অপূরণীয় ক্ষতির কারণে আমাদের পরিবারে এখন হতাশায় ভুগছে।”

বাংলানিউজের কাছে এমন করুণভাবেই আকুতি জানিয়েছেন শায়লা আরজুমান্দ বানু। তিনি রাজধানীর ইডেন কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।

তিনি বলেন, “আমার ছোট বোনকে আইবিএ থেকে বাদ দেওয়ায় তার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সোমা ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৭ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হয়।

সোমার বড়বোন বলেন, “আমার বোন ক্লাস ফাইভে মতিঝিল জোনে একমাত্র ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। সে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। আর তার জীবনে এটা কি ঘটলো। আমরা এখন কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না।”

প্রসঙ্গত, আইবিএর নিয়ম ভঙ্গ করায় কর্তৃপক্ষ তাকে ড্রপ আউট হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিশ দেয়। তিনি পুনরায় আইবিএতে ছাত্রত্ব রক্ষার আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তার আবেদন নাকচ করে দেয়। ফলে তিনি আইবিএর বিবিএর ছাত্রত্ব হারান। আইবিএর নোটিশ বোর্ডে সেই নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদিও ‘লিভ বিউটিফুল বা সৌন্দর্যে বাঁচো’ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলছে ২০১২ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ আয়োজনে সপ্তম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১২-এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে বুধবার আরো তথ্য প্রকাশ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.