যে কেউই উদ্যোক্তা হতে পারেনঃ সুমাইয়া কাজী by শেরিফ আল সায়ার

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’ এবং মার্কেট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাউড’ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি জরিপ পরিচালনা করে। এ তালিকায় ৬৭ নম্বর পেয়ে ১৭তম স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সুমাইয়া কাজী।

এ জরিপে তিনটি বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। প্রথমত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হতে হবে, টুইটারে সক্রিয় হতে হবে এবং ইংরেজিতে টুইট করতে হবে। টুইট বার্তাগুলোকে পরীক্ষার পর নির্বাচন করা হবে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ জন উদ্যোক্তাকে। এ জরিপে সুমাইয়া কাজী পেয়েছেন ১৭তম অবস্থান। তিনি সুমাজি ডটকম (sumazi.com) নামে সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
একের সঙ্গে অন্যের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার প্লাটফর্ম হিসেবে সুমাইয়া কাজী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে আরও বেশ কিছু প্রকল্প আছে। সঙ্গে আছে বেশ কিছু ওয়েবভিত্তিক ম্যাগাজিনও।

শুধু তাই নয় ২০০৬ সালে বিজনেস উইক ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের সেরা ৭৫ জন মহিলা উদ্যোক্তার একজন নির্বাচন হন তিনি। এ ছাড়া সিএনএনে `রকিং ইয়াং` এবং সিলিকন ভ্যালি বিজনেস জার্নালে `প্রভাবশালী নারী` হিসেবে ভূষিত হন সুমাইয়া।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে সুমাইয়া নামটি আজ বেশ সুপরিচিত। সুমাইয়া এবং তার কাজ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই বাংলানিউজ ই-মেইল মাধ্যমে তার একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারের উদ্যোগ নেয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এডিটর শেরিফ আল সায়ার।  

সুমাজি.কম মূলত কাজটা করে কীভাবে?

সুমাজি (sumazi.com) একে অন্যের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে জীবন পরিবর্তনে সহযোগিতা করে থাকে। আমরা পথ দেখাই, পরামর্শ দিই এবং অনেক অচেনা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই, যেসব মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় থাকা দরকার ছিল।

এটি একটি ফ্রি ওয়েব সার্ভিস। সুমাজি আপনার বন্ধুদের বলে দেবে কোন ধরনের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় থাকা জরুরি। সুমাজি সবার জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে। যে কেউ আপনার নেটওয়ার্কে ঢুকে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে। অন্যের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবেন। প্রত্যেককে নিজের ভাবনা শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে সুমাজি.কম।

যেমন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন হয় কিংবা উপদেষ্টা দরকার হয় অথবা ধরুন আপনার চাকরি দরকার। এসব বিষয়ের আপনার যাদের সঙ্গে পরিচয় থাকা দরকার সেই সব মানুষদের মিলনমেলা হচ্ছে সুমাজি। সোজা কথায়, সুমাজির কাজ হচ্ছে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম।

কখনও বাংলাদেশে এসেছেন?

হ্যা। আমি বহুবার এসেছি বাংলাদেশে। গত বছর আমি জিপিআইটি শীর্ষ ব্যক্তি কাজী ইসলামের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলাম।

বাংলাদেশের সেরা বিষয়গুলো সম্পর্কে কেমন ধারণা হয়েছে?

মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর, পরিশ্রমী এবং অসম্ভব স্মার্ট। আমার মনে হয় তারা অনেক কিছু করতে পারে, যদি সে সুযোগটা তাদের দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যবসা এবং আবিষ্কারে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পেশাদারি নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিসর বড় হওয়া শুরু করেছে। তাই সফলতা নিশ্চিতভাবেই আসবে।

বাংলাদেশের তারুণ্য বিশ্বসেরা উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে কি?

প্রতিটি তরুণই বিশ্বসেরা উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এ জন্য সময় প্রয়োজন। দরকার পরিশ্রম এবং জানার অদম্য আগ্রহ। শিক্ষা এবং তথ্য দিয়ে সাহায্য করলেই সফলতা পাওয়া সম্ভব।

সোশ্যাল বিজনেসের ভবিষ্যৎ কি? বাংলাদেশ কিভাবে এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হবে?

বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে সোশ্যাল বিজনেসের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং নেটওয়ার্কগুলোতেও সুযোগ বাড়ছে। যেমন ফেসবুক, লিংকেডিন এবং টুইটার প্রয়োজনীয় তথ্য (ডাটা) ব্যবসা করছে নিত্যনতুন সার্ভিস ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ভবিষ্যতে সবকিছু মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

বাংলাদেশ মোবাইল প্রযুক্তিতে অনেকদূর এগিয়েছে। যেসব উদ্যোক্তরা ভাবছেন বাংলাদেশে এ ধরনের সোশ্যাল ডাটা বিজনেস শুরু করবেন, তাদের জন্য মোবাইল হতে পারে সবচেয়ে সফল মাধ্যম। কারণ সুবিশাল জনসংখ্যার যেকোনো সমস্যা মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার করে সমাধান আনা সম্ভব। 

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আছে কি?

বাংলাদেশে সুমাজি নিয়ে আসতে চাই। প্রকৃত সুযোগের অভাবে যারা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো বিষয়ে সফল হতে পারে না, তাদের জন্য সুমাজি নতুন দুয়ার খুলে দেবে। মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। তৈরি হবে যোগাযোগ। কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার সুবিধা হবে এ বিষয়গুলো তারা নিজেরাই বুঝে এগিয়ে যাবে। শুধু যোগাযোগ নয়, তাদের মতামত দিয়ে সহযোগিতাও করার চেষ্টা করবো সুমাজির মাধ্যমে। 

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার শর্তগুলো কেমন?

সফল‍তার পেছনে আমি এখনও ছুটছি। সফলতার শেষ সীমা বলে কিছু নেই। আমি খুব সৌভাগ্যবান, একটি অসাধারণ দল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা সবাই অত্যন্ত আনন্দিত। কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে যাওয়াটাই বড়।

বাংলাদেশের তরুণেরা সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাদের জন্য কিছু বলুন?

প্রথমত তোমার কাছে অসংখ্য ভাবনা (আইডিয়া) আছে। আইডিয়া নিয়ে বসে আছ। তোমার মত এমন অসংখ্য মানুষ আছে। তাদের মতো হতে যেও না। সফল হওয়ার প্রথম ও সবচেয়ে কঠিন শর্ত হলো নিজের আইডিয়া বাস্তবায়নে কাজের সূচনা করা।

দ্বিতীয়ত, তোমার নিজের ওপর ফোকাস করো। তোমার কি আছে। কি নেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করো। তোমার কাজের সঙ্গে মিলিয়ে যেকোনো নেটওয়ার্ক বা কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করো।

নিজের আইডিয়া বাস্তবায়নে তৃতীয় ধাপে সহযোগী নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন। এটা হতে পারে পরিবার, বন্ধু, করপোরেট উদ্যোক্তা কিংবা এমন কেউ যে তোমার আইডিয়া বাস্তবায়নে করতে তোমাকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহ দেবে। তোমার লক্ষ্য পূরণে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে। আর সফল হওয়ার জন্য এটাই তোমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে।

আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি?

আমি সব সময় স্বপ্ন দেখি ভালো কিছু কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে। বিশ্ব এবং বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অলাভজনক একটি আইসিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে। এটা আমার একটা স্বপ্ন। এ নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনাও আছে।

No comments

Powered by Blogger.