আরব্য ললনাদের ‘বেলি ডান্স’ এখন বিশ্বময় by প্রীতি ওয়ারেছা

আরব্য রজনীর রহস্যময় হাজারো গল্প আমরা ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি। আরব্য রজনীর গল্পে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে নাচ আর গান। আর অরিয়েন্টাল নৃত্যশৈলীর পৃথক কোনো ধারার মধ্যে না পড়লেও শুধু জনপ্রিয়তার বিচারে বিভিন্ন ধারার নৃত্য কৌশল সন্নিবিষ্ট হয়ে নাচের আলাদা একটা ঘরানা তৈরি হয়েছে। সেটা হলো বেলি ডান্স। ভীষণ দৃষ্টিনন্দন নৃত্যকৌশল, চোখ ফেরানো যায়না।

ঐতিহ্যবাহি উৎসব ও বিশিষ্ট আয়োজনে মনোরঞ্জনের জন্য আররের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় বেলি নাচ এখন পৃথিবী সেরা। যে কোনো ধামাকায় বেলি নাচ না থাকলে জমবেই না সেই আসর।
ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম খৃস্টাব্দে এই নাচ আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তবে জনপ্রিয়তা লাভ করে নবম শতাব্দীর দিকে। অ্যারাবিক ডান্স, মিডল ইস্টার্ণ ডান্স সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এই বেলি ডান্স। মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপ, আমেরিকায় আছেন মেধাবী সব বেলি ডান্সার। তাদের অনেকে নৃত্যের শুধু এই শাখাতেই নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

আরবের জনপ্রিয় এই নাচ সেখানকার উচ্চ পদস্থদের মনোরঞ্জনের উত্তম বিষয়বস্তু হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এখনো খুব একটা সমাদৃত নয়। সেখানকার কঠোর ইসলামী মনোভাবাপন্ন মানুষেরা এটিকে অশ্লিল বলে মনে করেন। নিষিদ্ধ পল্লীর টোটকা মনোরঞ্জক উপাদান হিসেবেই মনে করেন। সেটাই আবার ইউরোপ আমেরিকায় দুর্দান্ত জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে বেলি ডান্সকে সবার কাছে নান্দনিক করে তুলেছেন পপসিঙ্গার শাকিরা। মনে আছে শাকিরার সেই অসাধারণ নাচের দৃশ্যের কথা ! বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই বেলি নাচ পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ উপভোগ করেছেন। বেলি ডান্স করে সুপারস্টারে পরিণত হয়েছেন এমন কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

আনসুয়া: সুপারস্টার আনসুয়া একজন মেধাবী আমেরিকান বেলি ডান্সার। ইন্ডিয়ান, স্প্যানিশ ও আফ্রিকান নৃত্যশৈলীর মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তার নাচে। নাচে নিত্যনতুন স্টাইলের সমাবেশ ঘটানোর অসাধারণ ক্ষমতা তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। আনসুয়া প্রচণ্ড এনার্জেটিক এবং সৃষ্টিশীল। তিনি একাধারে কস্টিউম ডিজাইনার, কোরিওগ্রাফার।

বেলি ডান্সার হিসেবে বহু পুরস্কারে ভূষিত আনসুয়াকে মিউজিক ভিডিও, টিভি শো, ম্যুভি এবং বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন। পারিবারিকভাবে আনুসুয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের বেলি ডান্সার। তার আমেরিকান মা জেনাইনি একজন প্রসিদ্ধ বেলি ডান্সার ছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ওজাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন আনসুয়া। চার বছর বয়স থেকে মায়ের কাছে তার নাচের হাতেখড়ি। মায়ের বাৎসরিক অনুষ্ঠান ফিচারিং ‘ইয়ালেইল’ যার অর্থ রজনী, আরব্য রজনীর থিমে পারফর্ম করার মধ্য দিয়ে আনসুয়া শুরু করেন নিজের ক্যারিয়ার। পারফর্মেন্সের কারণে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন ভারত, মিশর, জাপান, কানাডা, স্পেন, হাওয়াই, ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশ। ভালোবাসা থেকে একসময় নেশা ধরে যায় এই নাচের প্রতি। ১৯৮৯ সালে ‘ মিস টিন ওজাই’ নির্বাচিত হন।

মেয়ের উত্তরোত্তর সাফল্যে মা জেনাইনা মেয়ের হলিউডে অভিষেক ঘটানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। আট বছর বয়স থেকেই আনুসুয়া বিজ্ঞাপনে অংশ নেন, অভিনয় শুরু করেন এবং ডান্স টিচার হিসেবে কাজ করেন। বেলি ডান্সের ওপর আনসুয়ার প্রচুর ডিভিডি আছে। বেলি ডান্সকে আনসুয়া জীবনযাপনের একটি অন্যতম সুস্থ মাধ্যম হিসেবে দেখেন। তার মতে মহিলাদের জন্য বেলিডান্স হতে পারে একটি উত্তম ব্যায়াম।

জিলিস্ননা: লসঅ্যাঞ্জেলেসের সৃজনশীল ও মেধাবী একজন বেলি ডান্সার জিলিস্ননা। তিনি স্টেজে সবসময় দর্শক উদ্দীপক পারফর্মেন্স করে থাকেন আর নাইট ক্লাবগুলোতে তিনি রাতের রাণী হিসেবে সুপরিচিত। হলিউডের কাসাবস্নাঙ্কা নাইটক্লাবে জিলিস্ননার নিয়মিত নাচের আসর নির্ধারিত থাকে। অবিশ্বাস্য নৃত্যশৈলী, স্টেজে নিজেকে শিল্পময় উপাস্থাপন, কোরিওগ্রাফী, পেশাদারিত্ব, তারকাসুলভ মেকআপ জিলিস্ননার ক্যারিয়ারের উত্তরোরণে ডাইনামিক অবদান রেখেছে। তিনি আমেরিকার প্রসিদ্ধ একজন বেলি ডান্সার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

জিলিস্ননা জ্যাজ, ব্যালেট আর হিপ হপ ধরনের নাচ শেখার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন। সেসমস্ত ডান্স ফর্ম থেকে বের হয়ে এসে অরিয়েন্টাল ডান্সকে তিনি সিরিয়াসলি নেন কারণ তিনি দেখতে পান অরিয়েন্টাল ডান্সের প্রচুর চাহিদা। একসময় নিজেকে খাপ খাইয়ে নেন জিলিস্ননা। মিশরে ট্যুরে গিয়ে সেখানে নাচ শেখেন। আর এখানেই পরিচিত হন বেলি ডান্সের সঙ্গে। মিশরে তুমুল জনপ্রিয় বেলি ডান্স। হালস্নাল মুসত্মফা, জাহরা জহির, সেহরা, ফাইরম্নজ, অ্যাঞ্জেলিকা সহ প্রখ্যাত সব বেলি ডান্সারের সঙ্গে জিলিস্ননার পরিচিতি ঘটে।

নাচকে উচ্চকিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে জিল্লিনা গঠন করেন ‘ দ্য শাহলালা ডান্সার্স’ গ্রম্নপ। গ্রম্নপে আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মিশরীয় ডান্সার। মিশরীয় আর ওয়েস্টার্ন মিলিয়ে জিল্লিনা লাস ভেগাস শো'তে আলো ছড়াতে শুরম্ন  করেন। জিলিস্ননার খ্যাতি দিক্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেসে গড়ে তুলেন ডান্স স্টুডিও। সেই স্টুডিওতে বিয়োন্সে, ওমারিয়ন, লেইলা আলি, লিসা রেনা সহ প্রচুর হাইপ্রোফাইল ক্লায়েন্টদের নিয়মিত যাতায়াত। পপসিঙ্গারদের ডান্স পারদর্শীতা তো থাকতেই হয়। আর সেক্ষেত্রে স্টেজ মাতাতে সিঙ্গাররা নিয়মিতই বেলি ডান্স ফর্ম নিয়ে স্টেজে হাজির হচ্ছেন। বেলি ডান্সের দৃষ্টিনন্দন নৃত্যশৈলী  নিমেষের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমাদের দেশেও এই নাচের চর্চা নিয়মিত হচ্ছে। নাইট ক্লাবগুলোতে বেলি ডান্সের আকর্ষণ বাড়ছে ।

No comments

Powered by Blogger.