আইভরি কোস্ট-শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা

আইভরি কোস্টের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট লরা বাগবো সপরিবারে আটক হওয়ার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার দেশটিতে পুনরায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো। ২০১০ সালে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণাধীন অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক দশক ধরে বলপূর্বক ক্ষমতায় থাকা বাগবো তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াত্তারার কাছে পরাজিত হওয়ার পরও ক্ষমতা থেকে


সরে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানান। নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল মেনে নিতেও রাজি হননি তিনি। শেষ পর্যন্ত এই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অনুরোধে সেখানে অবস্থানরত ফরাসি সৈন্যরা আইভরি কোস্টবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে লরা বাগবোকে সপরিবারে আটক করতে সমর্থ হয়। তবে এরই মধ্যে অবিরাম গোলাবর্ষণ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনায় অনেক তাজা প্রাণ ঝরে যায়। স্বৈরাচার অনমনীয় হলে এবং মানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ না করলে একটি জাতির ভাগ্যে কী নিদারুণ দুর্দশা নেমে আসতে পারে আইভরি কোস্ট তার জ্বলন্ত সাক্ষী। সেজন্য শাসন-প্রশাসনের ব্যাপারে জনগণকেও সদাসতর্ক থাকতে হয়। আইভরি কোস্ট এক সময় আফ্রিকার চরম নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির মাঝে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তিন দশক আগে দেশটি স্বাধীনতা পাওয়ার পর দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতি এখানকার মানুষের এক উন্নত ঐতিহ্যের স্বাক্ষর দেয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার রশি টানাটানির শিকার হওয়ার কারণে দেশটির সম্প্রীতি টুটে যায়। খ্রিস্টান, মুসলমান ও আদিবাসী সংস্কৃতির মেলবন্ধন আলগা হতে শুরু করে রাজনীতির কুটিল চক্রান্তে। এই বলপূর্বক ক্ষমতা দখল ও পাল্টা দখলের সনাতনী পদ্ধতি আইভরি কোস্টকে জাতিগত লাইনে বিভক্ত করার বিপদ সৃষ্টি করে। গত বছর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে এর সমাধানের চেষ্টা হলেও সে প্রচেষ্টায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রেসিডেন্ট লরা বাগবোর ক্ষমতালিপ্সা। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সহায়তায় লরা সপরিবারে আটক হওয়ায় দেশটি পুনরায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের বিপদ থেকে রেহাই পেল। এখন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ওয়াত্তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনায় সাফল্য দেখাতে পারলে এক সময়ের জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশটি গৃহযুদ্ধের ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারবে। আমরা ওয়াত্তারার নেতৃত্বে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করি।
 

No comments

Powered by Blogger.