ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে জাতীয় পার্টি by মোশতাক আহমদ

এরশাদের দিল্লি সফর নিয়ে মহাজোটে নতুন ভাবনা শুরু হয়েছে। মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এরশাদ মহাজোটের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবেই ভারত গেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতারা এ সফরকে এরশাদের প্রতি ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন এবং আগামী দিনে তাঁদের দলের ক্ষমতায় যাওয়ার


ক্ষেত্রে এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। ছয় দিনের সফরে এরশাদ বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। গত সোমবার ভারত সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে তিনি নয়াদিল্লি পৌঁছেন।
এরশাদ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে ভারত সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সফরকালে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, বিদেশ সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের পর গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে।
মহাজোট সরকারের গত সাড়ে তিন বছরে এরশাদ একাধিকবার ভারতে গেলেও সে দেশের সরকার কখনো তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈঠক করেনি। কিন্তু এমন কী ঘটল যে একেবারে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে সে দেশের সরকার এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করবে? এ প্রশ্ন এখন ভালোমতোই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। মহাজোটের শরিক এই শীর্ষ নেতার প্রতি হঠাৎ দিল্লির 'কদর' বেড়ে যাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন।
এদিকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশেষ দূত হিসেবে এরশাদ ভারত সফর করছেন এবং এ সফরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদের দূরত্ব কমাতে কংগ্রেস কাজ করছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে এরশাদের গুরুত্বের বিষয়টি মাথায় রেখেই এটা করছে আওয়ামী লীগ।
কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব কথা মানতে নারাজ জাতীয় পার্টির নেতারা। এ বিষয়ে এরশাদের উপদেষ্টা আব্দুস সবুর আসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শেখ হাসিনার দূত হিসেবে ভারতে যাওয়ার মতো আওয়ামী লীগে অনেক নেতা রয়েছেন। তাঁর মতে, এরশাদ বাংলাদেশের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি ও এ দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবেই ভারত সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত তার প্রয়োজনেই এরশাদকে ডেকেছে। এটা কারো করুণা নয়।
নানা কারণে ভারত সরকার এরশাদকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দাবি কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার। এরশাদের সঙ্গে ভারত সরকারের বৈঠক নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের শীর্ষ এই বাংলা দৈনিকটি। তারা লিখেছে, 'এরশাদকে যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব দিচ্ছে দিল্লি। দিল্লি মনে করছে, নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর ঢাকার পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।'
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, 'হাসিনার সঙ্গে এরশাদের সাম্প্রতিক মতবিরোধের কথা নয়াদিল্লির অজানা নয়। তাই বাংলাদেশে সুস্থিতির স্বার্থে এরশাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত রাখাটাও নয়াদিল্লির পক্ষে মঙ্গলের হবে।'
এদিকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলা হলেও ছয় দিনের এই সফরে মূলত আগামী দিনের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ও তাঁর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিশেষ মিশন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির একাধিক সিনিয়র নেতা। এরশাদের দিল্লি সফরকে ঘিরে তাঁরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরালো তদবির করতে বিশেষ মিশন নিয়ে ভারত গেছেন দলের চেয়ারম্যান। তিনি যেকোনো মূল্যে আগামী দিনে ক্ষমতায় যেতে চান। এ জন্য প্রতিবেশী দেশটির সহযোগিতা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দিল্লির সহায়তা চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু এত দিন দিল্লির সাড়া পাওয়া যায়নি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, দুই নেত্রীর প্রতি দেশের মানুষের আস্থাহীনতা এবং এরশাদের নীরব জনপ্রিয়তার কথা উপলব্ধি করে দীর্ঘদিন পর দিল্লি তাঁর দিকে ফিরে তাকিয়েছে। দলের অবস্থান পোক্ত করতে গত এক বছরে এরশাদ একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, সৌদি আরব ও চীন সফরে যান বলেও জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকির আশরাফ বলেন, এরশাদের এই সফর জাতীয় পার্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগামী দিনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার পথে এই সফর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কারণ ভারতের সমর্থন ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার অন্যদের চেয়ে এরশাদকেই এ মুহূর্তে বেশি মিত্র ভাবছে। তাই তারা এরশাদের সঙ্গে সংযোগ গড়তে চায়। এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং ভারতের কোচবিহারে এরশাদের আদিপুরুষের বসতবাড়ি থাকা।

No comments

Powered by Blogger.