পবিত্র জুমাতুল বিদা আজ by মিরাজ রহমান

আজ পবিত্র জুমাতুল বিদা। মাহে রমজানের বিদায়লগ্নের শুক্রবার তথা শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বের কাছে 'জুমাতুল বিদা' নামে পরিচিত। এ জুমার দিনটি পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবেও 'আল-কুদস' দিবস নামে পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম।


দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তুলনায় সাপ্তাহিক জুমার নামাজে মুসলমানদের সমাগম বেশি হয়। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর নামাজের জামাত। রমজান মাসের প্রতিটি জুমাবার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময়। কারণ পবিত্র রমজান হওয়ার কারণে এই জুমাবারের ফজিলত বৃদ্ধি পায়। পবিত্র জুমাতুল বিদাসহ মাহে রমজানের প্রতি জুমাবারে ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক সওয়াব লাভের সুযোগ রয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জুমার দিন শুক্রবার প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর জুমার নামাজে শরিক হওয়া ওয়াজিব যদি, সে এমন শহর বা জনপদে বসবাস করে, যেখানে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে জুমাবারের বিবিধ ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। নবী করিম (সা.) জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, 'সব দিনের চেয়ে উত্তম জুমার দিন। এই দিনে হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।' (সহিহ মুসলিম শরিফ)। মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা জুমার রাতে মারা যান, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।' (সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফ)।
জুমাতুল বিদার বা রমজানের শেষ শুক্রবারের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য সর্বাধিক। কয়েকটি পুণ্যময় দিন ও রাতকে মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে মর্যাদাবান করা হয়েছে। বরকতময় এবং ফজিলতপূর্ণ মাস হওয়ায় পবিত্র রমজানের প্রতিটি দিন-রাত উত্তম হওয়ার পাশাপাশি রমজান মাসের সর্বোত্তম রজনী হলো লাইলাতুল কদর আর সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা। কেবল একটি নয় যে দুটিই মাহে রমজানে পরিসমাপ্তি সূচক। লাইলাতুল কদরের অবস্থান ও জুমাতুল বিদার অবস্থান পবিত্র রমজান মাসের শেষ লগ্নে। হাদিস শরিফে এসেছে মহানবী (সা.) বলেন, 'এ মাসের তিন অংশের প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং শেষের অংশ নাজাত তথা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির।' ১০ দিন পরকালীন মুক্তি অর্থাৎ দোজখের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রমজানের শেষ ১০ দিনে যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। এই দিনে মুমিন মুসলমানদের ইমানি সম্মিলন হয়। মাহে রমজানের প্রতিটি শুক্রবারই অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময়। এর মধ্যে বিদায়ী শুক্রবার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অতি মূল্যবান। এই দিন মাহে রমজান শেষ হয়ে যাওয়ার সতর্কতামূলক দিবস। জুমাতুল বিদা রোজাদারদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে মাহে রমজানের সমাপনান্তে এ বছর এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং এ পুণ্যময় দিনটির যথাযথ সদ্ব্যবহার করা অপরিহার্য কর্তব্য। মাহে রমজানের শুরু থেকে যেসব ইবাদতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে, গুনাহখাতা মাফের জন্য কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে যে অলসতা হয়েছে, জুমাতুল বিদার পবিত্র দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময় সেসব ভুলভ্রান্ত্রির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। এই দিনটির প্রতি অমনোযোগী বা গাফেল না হয়ে এর বরকত হাসিল করা বাঞ্ছনীয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, 'যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।'
জুমাতুল বিদা রমজানুল মোবারকে হওয়ায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে এটি বিশেষভাবে আত্মিক উন্নতির জন্য খুবই উপযোগী। মাহে রমজানে নামাজের মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ও রহমত অন্বেষণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যে তিনটি বিষয় জুমাতুল বিদাকে আল্লাহর করুণা, দয়া, ক্ষমা তথা মাগফিরাত ও নাজাত লাভের দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে মাহে রমজান, জুমাতুল বিদা এবং রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল-কুদস দিবস। জুমাতুল বিদার বিশেষ তাৎপর্য এই যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র মহামতি হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তায়ালার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদ আল-আকসা। মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীর পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদ আল-আকসা। জুমাতুল বিদার গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য আরো দুটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। এক. মাহে রমজানের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য। দুই. সপ্তাহের মধ্যে জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ আমাদের এই দিবসটিকে যথাযথভাবে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.