মুমতাজ এবার সুপ্রিয়া দেবী মুমতাজ এবার স্মৃতির সরণিতে

একটু পুরনো সময়ের বাংলা ছবির স্মৃতিচারণ করলে কেমন হয়? লেখার শুরুতেই খামোখা এমন প্রস্তাব কেন? কারণ আছে; তার আগে একবার পাক খাওয়া যাক-ই না স্মৃতির সরণিতে!

তো, ‘কোমল গান্ধার’-এর অনসূয়া, ‘বনপলাশীর পদাবলী’-র পদ্ম, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’-র মা, ‘চৌরঙ্গী’-র করবী গুহ, ‘বিপাশা’-র বিয়াস, ‘সিস্টার’ ছবির ভুবনমোহিনী সিস্টারের কথা মনে পড়ছে? অথবা ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র নীতা? এতগুলো ছবির নাম জপ করার একটাই কারণ, সবগুলোতেই একজন অভিনেত্রীর ভুলতে না পারা অভিনয়ে দর্শক আজও হয়ত আবেগপ্রবণ। হ্যাঁ, সুপ্রিয়া দেবী ছাড়া আর কারও কথা বলছি না। ৮০’র দশকের গ্ল্যামারাস ড্রিম গার্ল যেমন এই সুপ্রিয়া দেবী; তেমনই ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে তিনি এক আটপৌরে আবিষ্কার। দীর্ঘ সময়ের স্রোতে আর ফিরে পাওয়া যাবে না মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির সুপ্রিয়াকে, তবে ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে তিনি ফের ফিরে আসছেন। মানে?
মানে, ঋত্বিক ঘটক হাত দিয়েছেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে; সে ছবি সুপ্রিয়া ছাড়া হবে কী করে? হেঁয়ালি ভাঙলে, ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়; সেই ছবিতেই এক অভিনেত্রীর অভিনয়ে ফিরে আসছেন সুপ্রিয়া। তার একরোখা মার্জিত অভিনয়ের আদলেই তৈরি হচ্ছে সেই অভিনেত্রীর চরিত্র। তা, কে অভিনয় করতে চলেছেন এই প্রবাদপ্রতিম নায়িকার ভূমিকায়? ছবির প্রধান ভূমিকায় সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রের আদলে গড়ে ওঠা চরিত্রে রুপোলি পর্দা জুড়ে খুব শিগশিরই দেখা যাবে পি.সি.সরকার তনয়া মুমতাজকে।

আর বাংলা ছবির এমনই এক স্টলওয়ার্ট সুপ্রিয়া দেবীর আদলে গড়ে ওঠা চরিত্রটিতে নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিতে উদগ্রীব সরকার তনয়াও। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটা ছবি করে মুমতাজ এখন স্পটলাইটে। শেষ দুটো ছবি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ আর ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’-এ দুই ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে আমরা পেয়েছি মুমতাজকে। তবে এবারে তার অভিনয়ে তো বটেই, পাশাপাশি লুকেও থাকছে একটু ট্যুইস্ট। একেবারে সেই সময়ের স্টাইল বোধে পাক্কা অথচ এলোমেলো ভাসন্ত মেয়ের মতো করে সাজছেন তিনি। না, কোনো রকমের মেক আপ থাকছে না ছবিটিতে মুমতাজের! হাল্কা টাচ আপে চোখের নিচে কিছুটা ছন্নছাড়া কালিমা, উড়ন্ত অগোছালো চুলের রাশি কিম্বা উস্কোখুস্কো এক নারী হিসেবেই দেখা যাবে মুমতাজকে।

সব শেষে জানিয়ে রাখি- ছবির নাম ‘জ্বালা’। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বেশ রমরমিয়ে বাংলার প্রেক্ষাগৃহ কাঁপাতে খুব তাড়াতাড়িই আসছে ছবিটি। ঋত্বিক ঘটকের জীবনী নিয়েই এগোবে ‘জ্বালা’-র স্টোরিলাইন। ঋত্বিক ঘটকের ভূমিকায় ছবিটিতে অভিনয় করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং ঋত্বিকঘরণীর চরিত্রে এই ছবিতে দেখা যাবে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে।

এত কিছুর পরেও একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়। যে ছবি ঋত্বিক ঘটকের বায়োপিক, তা কতটা সুবিচার করবে সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রের প্রতি? ছবিতে অবশ্য তার চরিত্রের নাম সুমিতা দেবী। যতটুকু জানা গিয়েছে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র শ্যুটিং দৃশ্যের সময় অনিল চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় রাহুল আর সুপ্রিয়ার চরিত্রে অভিনয় করছেন মুমতাজ। এখন ঝিনচ্যাক কুল ইমেজের বাইরে গিয়ে মুমতাজ কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন সুপ্রিয়া দেবীর অনস্ক্রিন মহিমা, তারই অপেক্ষায় দিন গুনছেন দর্শক।

আর নায়িকা? তিনি কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন এরকম একটা কিংবদন্তী চরিত্রে অভিনয় করতে? ‘কমলেশ্বরদা যখন সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রটা আমায় করার কথা বললেন, আমি তো নিজের কানদুটোকে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না! ঠিক শুনছি তো? সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রে অভিনয় করা তো আর ছেলেখেলা নয়; বরং বেশ শক্ত কাজ। অবশ্য কমলেশ্বরদা আমায় যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন; সুপ্রিয়া দেবীকে হুবহু অনুসরণ না করে নিজের মতো করে অভিনয় করতে বলছেন। আমিও তাই করছি’, সহাস্য জবাব সুমিতা ওরফে সুপ্রিয়া ওরফে মুমতাজের! সূত্র: ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.