কারুশিল্পীদের তালা- স্টল বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কারুপল্লীর বিভিন্ন স্টল প্রকৃত শিল্পীদের নামে বরাদ্দ না দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের পরিচালক তাঁর নিজস্ব লোকজনের মধ্যে বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কারুশিল্পীরা গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করে বিভিন্ন স্টলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভেতরে অবস্থিত কারুপল্লীকে সম্প্রতি নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। গত মাসে এ কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় স্টল বরাদ্দের পালা। আগের ৩৫টি স্টলের সঙ্গে নতুন করে নির্মিত ১৩টি স্টল যোগ করে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ যাচাই-বাছাই ছাড়া একক সিদ্ধান্তে উৎকোচের বিনিময়ে নামে-বেনামে তাঁর পছন্দের লোকজনের মধ্যে ১৩টি স্টল বরাদ্দ দেন। নতুন এসব স্টলের জন্য পাঁচ শতাধিক আবেদনপত্র জমা পড়লেও কী প্রক্রিয়ায় স্টলগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আবেদনকারীরা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না।
দেশের একমাত্র লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে প্রকৃত কারুশিল্পীরা স্টল বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও একজন কারুশিল্পীকেও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ অত্যন্ত গোপনে স্টলপ্রতি তিন লাখ থেকে সাত লাখ টাকা করে নিয়ে ১৩টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পরিচালকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক বুলবুল মিয়ার ছোট ভাই ও শ্যালিকার নামেও দুটি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কারুপল্লীতে আগে থেকেই স্টল যাঁদের আছে, তাঁদের মধ্যে ইব্রাহিম মিয়া, সোহেল মিয়া, ওসমানসহ ছয়জন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাঁদের স্ত্রী ও ভাইবোনের নামে আবারও একাধিক স্টল বরাদ্দ পেয়েছেন।
স্টল বরাদ্দের ব্যাপারে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারুশিল্পী আউয়াল মোল্লা জানান, ‘আমি ৪৩ বছর ধরে কাঠখোদাই কারুশিল্পের সঙ্গে জড়িত। আমার আবেদনেও পরিচালক সাড়া দেননি।’ বেতশিল্পী পরেশ চন্দ্র সাহা ও নকশিকাঁথার শিল্পী হোসনে আরা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে কারুশিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকেও স্টল পাইনি। পরিচালক রবীন্দ্র গোপ তাঁর অনুগামী এ কে আজাদ সরকারকে আহ্বায়ক, রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা ইয়ামিন খান, গাইড লেকচারার মনিরুজ্জামানকে দিয়ে স্টল বরাদ্দের কমিটি গঠন করেন।’ কমিটির আহ্বায়ক আজাদ সরকার বলেন, ‘আমরা কমিটিতে থাকলেও সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিচালক নিজে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমরা ছিলাম নামমাত্র।’
তবে একটি সূত্র দাবি করছে, এ তিনজনই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। স্থানীয় সাংসদ আবদুলাহ আল কায়সার বলেন, ‘স্টল বরাদ্দের ব্যাপারে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। তা ছাড়া স্টলে বিক্ষুব্ধ আবেদনকারীদের তালা লাগানোর বিষয়টি শুনেছি।’ পরিচালক রবীন্দ্র গোপ বলেন, ‘স্টল বরাদ্দে অনিয়ম করিনি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। আমি দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’

No comments

Powered by Blogger.